জাতীয় সংবাদ

অগ্নিঝরা মার্চ’ ৭১

স্বাধীনতার পথে অগ্রযাত্রা

এফএনএস: ১৯৭১ সালের ১৩ মার্চ। বাংলাদেশে তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আহূত অসহযোগ আন্দোলনের ষষ্ঠ দিন চলছে। এই আন্দোলন আর সাধারণ কোনো প্রতিবাদ নয়, এটি ছিল এক জাতির মুক্তির ডাক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান কার্যত তাঁর নির্দেশেই পরিচালিত হচ্ছিল। স্বাধীনতা তখন কেবল সময়ের ব্যাপার।

দেশজুড়ে আন্দোলন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সংগ্রামের ময়দানে। কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষকÑসবার একটাই স্লোগান, একটাই লক্ষ্যÑবাংলাদেশের স্বাধীনতা। পত্রিকার শিরোনামও ছিল: “অসহযোগ আন্দোলনের ষষ্ঠ দিবস পরিপূর্ণ সাফল্যের সঙ্গে অতিবাহিত হয়”।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা তখন অনিবার্য। বিষয়টি উপলব্ধি করেই পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় নেতারা বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান। কিন্তু ততক্ষণে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বুঝতে পারে, ক্ষমতা ছাড়লেই তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। তাই নানা কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা বাঙালির আন্দোলন দমনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

এদিকে করাচিতে ভুট্টো রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করতে নতুন করে দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব দেন। এটি ছিল মূলত পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার পথে বাধা সৃষ্টি করার একটি কৌশল।

এই দিন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ঘোষণা দেয় যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে যারা চাকরি করেন, তারা যদি ১৫ মার্চের মধ্যে কাজে যোগ না দেন, তবে তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে। এ আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ‘ওরা কাজে যাবে না’Ñএমন স্লোগানে মুখরিত হয় শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু সরাসরি এ আদেশকে উস্কানিমূলক বলে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বাঙালিকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

এদিকে, পূর্ব পাকিস্তানে চলমান অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব পশ্চিম পাকিস্তানেও পড়তে শুরু করে। পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়ায় পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরাও সংকটে পড়ে যায়। তাদের বাণিজ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, এবং তারা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।

একই দিনে জমিয়াতুল ওলেমা ইসলামিয়া সংসদীয় দলের নেতা মাওলানা মুফতি মাহমুদের সভাপতিত্বে এক সভায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করা হয়Ñ
১. পূর্ব পাকিস্তান থেকে সামরিক আইন প্রত্যাহার
২. ২৫ মার্চের আগে ক্ষমতা হস্তান্তর
৩. সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া

১৯৭১ সালের এই দিনটি ছিল বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের সব চক্রান্ত ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে বাঙালি জাতি এক চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। সামনে অপেক্ষা করছিল ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামÑবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button