ভারতের নাগপুরে হিন্দু-মুসলিম সহিংসতা : কারফিউ জারি

# স¤্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবি #
# ৩৪ পুলিশসহ ৩৯ আহত, ৪৫টি গাড়ি ভাঙ্গচুর, অগ্নিসংযোগ #
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ ভারতের নাগপুরে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিতে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ৩৪ পুলিশ সদস্যসহ ৩৯ জন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে অর্ধশতাধিক। সহিংসতার সময় অন্তত ৪৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি মোকাববিলায় নাগপুরের কয়েকটি স্থানে কারফিউ জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার ডিস্ট্রিক্ট গার্ডিয়ান মিনিস্টার চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুল এ তথ্য জানিয়েছেন। ১৭ শতকের সম্রাটের সমাধি আওরঙ্গবাদে অবস্থিত, যা বর্তমানে ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলা নামে পরিচিত। বিজেপি নেতাদের পাশাপাশি কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো বেশ কিছুদিন ধরে তার সমাধি সরানোর দাবি করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ মার্চ সমাধি সরানোর দাবিতে নাগপুরের মহাল এলাকায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বজরং দল বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা এ সময় আওরঙ্গজেবের কুশপুত্তলিকা দাহ করে, তার সমাধিতে থাকা একটি ছবি এবং সবুজ কাপড়ে মোড়ানো একটি প্রতীকী সমাধি পুড়িয়ে দেয়। এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নাগপুরের চিটনিস পার্কে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ঘটস্থলে এলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ করে পাথর ছোড়ে। এতে বেশ কজন আহত হন।
কিছু বাসিন্দা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, চিটনিস পার্কের কাছে ওল্ড হিসলপ কলেজ এলাকায় জনতা প্রবেশ করে এবং চারটি গাড়ি ও বাড়িতে ভাঙচুর করে। তারা বাড়িগুলোতে পাথর ছুড়ে জানালার কাচ ভেঙে পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, বিক্ষোভকারীরা তা-ব চালানোর সময় মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন। বিক্ষোভের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে কয়েকজন আহত হন। এ সময় পুলিশকে লক্ষ করে পাথর ছুঁড়লে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়। এলাকার একজন বাসিন্দা এএনআই সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, আক্রমণকারীরা মুখোশ পরে ধারালো অস্ত্র এবং বোতল বহন করেছিল। এতে আহত হন ৩৪ পুলিশ সদস্য, যাদের মধ্যে কজনের অবস্থা গুরুতর। ঘটনার ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ায় কোতোয়ালি, গণেশপেঠ, তহসিল, লাকাদগঞ্জ, পাচপাওলি, শান্তিনগর, সক্করদারা, নন্দনবন, ইমামওয়াদা, যশোধরানগর এবং কপিলনগর থানা এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। সোমবার সাংবাদিকদের মন্ত্রী চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, আহত ৫ জন সাধারণ নাগরিকের মধ্যে দুজনকে স্থানীয় একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। শহরে শান্তি বজায় রাখা এবং কোনো সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে না দিতে বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, সোমবার কারা গুজব ছড়িয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
এদিকে, ভিএইচপি কোনো সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, সমাধিস্থলটিতে স্থানীয় মারাঠা সম্প্রদায়ের শাসকদের জন্য একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মিলিন্দ পরান্ডে একটি ভিডিও বার্তায় এসব কথা জানিয়েছেন। ভিএইচি মূলত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আদর্শিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আএসএস) সহযোগী সংগঠন। আর এই সংগঠনের সদর সপ্তরও নাগপুরে। নাগপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকরিও বলছেন, গুজব থেকেই এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়েছে।
নাগপুরের পুলিশ কমিশনার রবীন্দ্র সিংগল বলেছেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। গুজবে কান না দিতে এবং আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এসব ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনাভিশ। এ ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেন তিনি। তিনি বলেন, সহিংসতায় কমপক্ষে ৩৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, যার মধ্যে তিনজন ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশও রয়েছেন। এমনকি একজন কর্মকর্তাকে কুড়াল দিয়েও আক্রমণ করা হয়েছে।
এর আগে গত ৪ মার্চ বিজেপি নেতা নবনিত রানাও সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি ভেঙে ফেলার দাবি করেছিলেন।