জাতীয় সংবাদ

স্বাধীনতার ঐতিহাসিক দিন

অগ্নিঝরা মার্চ’ ৭১

এফএনএস: ২৬ মার্চ, ১৯৭১। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে, একাত্তরের এই দিনটি ছিল বাঙালির ইতিহাসের এক অগ্নিঝরা মুহূর্ত। ভয়াল রাতে যখন সারা দেশ কাঁপছিল পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতায়, তখন ঘর-ঘর, মানুষ-মানুষের বুকের ভিতরে জ্বলে উঠেছিল স্বাধীনতার চেতনা। সেই রাতের রক্তাক্ত পরিণতিতে শত্রুপক্ষের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। একাত্তরের এই দিনটি ছিল আমাদের মুক্তির সূচনা, অঙ্গীকার এবং সংগ্রামের প্রথম পাথেয়।

ওই ভয়াল রাতের পরে, মানুষের জীবনে এসেছিল এক নতুন সূর্য, যা ঝলমলে করে তুলেছিল বাঙালি জাতির মুক্তির পথে হাঁটা। যখন পুরো দেশ ছিল আতঙ্কে, তখন সাহসী বাঙালি ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে সামনে রেখে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এক মুহূর্তের জন্যও পিছিয়ে না পড়ে, দেশমাতৃকার স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আত্মনিয়োগ করেছিলেন দেশপ্রেমিকরা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তারা জীবন বাজি রেখে শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধ।

এদিনের ভয়াবহতা, রক্তাক্ত যুদ্ধ এবং দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রাম ছিল শুধু একটি লক্ষ্যÑস্বাধীন বাংলাদেশ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, হাজার হাজার শহীদের আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে। তবে শুধু যুদ্ধের নয়, মানুষের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের জয় ছিল এই স্বাধীনতা। পুরো জাতি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে তাদের প্রতি, যারা নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করে, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন।

আজ ২৬ মার্চ, ২০২৫; স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও সেই দিনটি স্মৃতিতে উজ্জ্বল। স্বাধীনতার জন্য নিরস্ত্র মানুষের আত্মদান এবং জাতির অদম্য সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই আমাদের বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশ। আজকের এই দিনটি জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং গৌরবময় স্মৃতির দিনে পরিণত হয়েছে। নানা রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আজও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে, এবং সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাবে স্বাধীনতার মহীয়সী ইতিহাসের প্রতি।

তবে, আজও এই দিবসের সুরভিত আলোচনায় এক বিশেষ অনুভূতি বিরাজ করছে। পূর্বের দিনগুলোর মতো আজও আলোচনায় আসছে সেই অসীম সাহসী মানুষগুলো, যারা নিজেদের জীবন দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। একদিকে তাদের আত্মদান, অন্যদিকে দেশের স্বাধীনতার চেতনা, এই দিনটি শানিত হয়ে ওঠে জাতীয় জীবনের ঐতিহাসিক পাথেয়।

স্বাধীনতার এই দিনটি আমাদের শিখিয়েছে সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের মূল্য, যা কখনো হারিয়ে যাবে না। আজকের দিনটি পুনরায় আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা যারা মুক্ত পৃথিবীতে বাঁচছি, তাদের কাছে এই স্বাধীনতা একটি অমূল্য রতœ। ২৬ মার্চ, ১৯৭১Ñএ দিনটির অগ্নিস্মৃতি চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে আমাদের হৃদয়ে।

আজকের দিনে, যখন সূর্যের রোদে কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলি রাঙাবে, নদী তীরে শাখা থেকে ভেসে আসবে কোকিলের কুহুতান, আমাদের হৃদয়ে আবারও জেগে উঠবে সেই মুক্তির স্বপ্ন। আজকের দিনটি আমাদের আবেগ, শ্রদ্ধা এবং গৌরবের এক চিরন্তন উজ্জ্বল ¯িœগ্ধতা বয়ে আনবে। এভাবে স্বাধীনতার ৫৪তম বার্ষিকী আজ আমাদের মধ্যে জীবন্ত হয়ে রয়েছে। সে দিনটির শোক, সংগ্রাম ও জয়, এটাই আমাদের সংগ্রামের প্রেরণা এবং অগ্রগতির পথচলা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button