নারী সংস্কার কমিশনের ইসলামবিরোধী প্রস্তাব

# কমিশন বাতিলের দাবি হেফাজতের, বিস্মিত জামায়াত #
# ৩ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতের মহাসমাবেশ #
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ নারী বিষক সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়া ইসলামবিরোধী উত্তরাধিকার আইন এবং পারিবারিক আইন সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব এবং ওই কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এই ইস্যুসহ আরো চার দাবিতে আগামী ৩ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে সংগঠনটি। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। রোববার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেয়া হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান এবং যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক। এর আগে সেখানে হেফাজতের কেন্দ্রীয় মজলিসে আমেলা তথা কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। প্রেস ব্রিফিংয়ে আল্লামা সাজিদুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে আমেলার বৈঠকে আগামী ৩ মে রাজধানীর ঐতিহাসিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতের মহাসমাবেশ করার বিষয়ে ঐক্যমত্য হয়েছেন সবাই। সেখানে বেশ কিছু দাবি জানানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মহাসমাবেশে যেসব দাবি তুলে ধরা হবে সেগুলো উল্লেখ করে আল্লামা মামুনুল হক বলেন, বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদের আমলে হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরের সমাবেশের ঘটনাসহ নানা সময়ে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া শাপলা চত্ত্বরে গণহত্যা, মোদীবিরোধী আন্দোলনের সময় হত্যাকা-সহ হেফাজত নেতাকর্মীদের সব হত্যাকা-ের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হবে মহাসমাবেশে থেকে। দ্বিতীয় দাবি- সংবিধান সংস্কার কমিশনে বহুত্ববাদের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানানো হবে। একইসঙ্গে সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করতে হবে। তৃতীয় দাবি- নারী সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে শনিবার যে প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে ধর্মীয় বিধিবিধান বিশেষ করে ইসলামবিরোধী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই প্রস্তাব হেফাজতে ইসলাম চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। এটি বাতিল ও এ ধরণের প্রস্তাব দেয়ায় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জানানো হবে। চতুর্থ দাবি- ভারতের মুসলিমবিরোধী যে ওয়াকফ বিল পাস করা হয়েছে তা বাতিলের দাবি এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হবে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং হত্যাকা- বন্ধে বিশ্ব নেতৃত্বকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হবে মহাসমাবেশ থেকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই মহাসমাবেশ সফল করতে আগামী মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী সোমবার পর্যন্ত এক সপ্তাহ দেশব্যাপী গণসংযোগ, ২৫ এপ্রিল শুক্রবার বাদ জুমা সব জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম। এছাড়া ইমাম-খতিবদেরকে জুমার খুতবায় কোরআনের আইন, উত্তরাধিকার এবং পারিবারিক আইনের বিষয় তুলে ধরার আহ্বান জানান হেফাজত নেতারা। জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মজলিসে আমেলার ২১১ জন সদস্যের মধ্যে রোববারের বৈঠকে ১৩৫ জন উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে এ বৈঠক।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ‘বিস্মিত’ জামায়াত আমির ঃ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। সেই প্রতিবেদনের কিছু সুপারিশমালা নিয়ে হচ্ছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এবার সেই প্রতিবেদন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। রোববার (২০ এপ্রিল) রাত ৮টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এ বিষয়ে একটি পোস্ট করেন জামায়াত আমির। পোস্টে জামায়াত আমির বলেন, গতকাল অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। তাদের সুপারিশকৃত রিপোর্ট দেখে বিস্মিত। তিনি আরও বলেন, দেশে যখন নৈতিকতার অভাবে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং পারিবারিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে উক্ত সুপারিশমালায় এমন কিছু গর্হিত বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে তা সমাজকে অনিশ্চয়তা ও চরম অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিবে। জামায়াত আমির আরও বলেন, কতিপয় সুপারিশ কোরআন এবং হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি সকল ধর্মের মূল্যবোধকে তছনছ করে দেবে। বাংলাদেশের জনগণ এক বাক্যে তা প্রত্যাখ্যান করবে।