জাতীয় সংবাদ

পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিকদের ২৫ মে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি

প্রবাহ রিপোর্ট : দেশজুড়ে জ্বালানি তেল উত্তোলন, পরিবহন ও বিপণন খাতে নজিরবিহীন অচলাবস্থার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কমিশন বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে ক্ষুব্ধ হয়ে আগামী ২৫ মে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদ। গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা জানান, দাবি পূরণে সরকার বারবার আশ^াস দিলেও বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে বাধ্য হয়ে কর্মবিরতির পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল লিখিত বক্তব্যে বলেন, “বিগত কয়েক বছর ধরেই কমিশন বৃদ্ধি ও লাইসেন্স-সংক্রান্ত জটিলতা সমাধানে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। কিন্তু প্রতিবারই কেবল আশ^াস মেলে, বাস্তবায়ন হয় না। ফলে আজ আমরা চূড়ান্তভাবে হতাশ। এখন আর ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।”
তিনি আরও জানান, চলমান জ্বালানি ব্যবসার পরিবেশ এতটাই প্রতিকূল হয়ে উঠেছে যে, শুধু কমিশন কম নয়, বরং নানা নতুন ফি, লাইসেন্স এবং প্রশাসনিক হয়রানিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঐক্য পরিষদের ১০ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো:
১. তেল বিক্রির কমিশন ন্যূনতম ৭ শতাংশে উন্নীত করা
২. সওজ অধিদপ্তরের জমির ইজারা মাশুল পুরনো হারে বহাল রাখা
৩. বিএসটিআইর অতিরিক্ত লাইসেন্স ও ফি বাতিল করা
৪. পেট্রোল পাম্পকে শিল্প হিসেবে চিহ্নিত না করে কমিশন-ভিত্তিক ব্যবসার মর্যাদা দেওয়া
৫. ট্যাংকলরির কাগজপত্র যাচাই শুধুমাত্র তেল ডিপোর গেটে করা
৬. সব ট্যাংকলরির জন্য আন্তঃজেলা রুট পারমিট ইস্যু
৭. ডিলারশিপ ছাড়া তেল বিক্রি বন্ধ করা ও অবৈধ বিক্রয়কেন্দ্র উচ্ছেদ
৮. ট্যাংকলরি চালকের লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়া সহজ করা
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাজমুল হক, যুগ্ম-আহ্বায়ক মিজানুর রহমান রতন, জুবায়ের আহাম্মেদ চৌধুরী প্রমুখ। সৈয়দ কাবুল অভিযোগ করেন, ২০২৫ সালে বারবার বৈঠক ও স্মারকলিপি দিলেও তাতে সাড়া দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারি বিপিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেই আশ^াসে ১ মার্চের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেন, “সরকার প্রতিবার দাবি পূরণে লিখিত আশ^াস দেয়, কিন্তু বাস্তবে কিছুই ঘটে না। এভাবে আর চলতে পারে না। তাই আমরা ১২ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছি। যদি ২৪ মে’র মধ্যে দাবি পূরণ না হয়, তবে ২৫ মে প্রতীকী কর্মসূচির মাধ্যমে তেল উত্তোলন, পরিবহন ও বিপণন সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।” কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখা হয়েছে হজ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জ্বালানি পরিবহন। এছাড়া সাধারণ জনগণকে ২৫ মে’র কর্মসূচির আগেই প্রয়োজনীয় তেল সংগ্রহের আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এমন উত্তেজনা ও অস্থিরতা দীর্ঘমেয়াদে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলতে পারে। সরবরাহ ব্যবস্থায় ছেদ পড়লে শুধু যানবাহন নয়, শিল্প-কারখানা, কৃষি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামেও এর প্রভাব পড়তে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button