ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানসহ ২০ সিনিয়র কমান্ডার নিহত
ইসরাইলে ইরানের শতাধিক ড্রোন হামলা বলছে ইসরাইল : ইরানের না

# ইরানে ইসরাইলের বিমান হামলা #
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ ইসরায়লি হামলায় ইসলামিক রেভুলশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল হোসেইন সালামি, বিমানবাহিনীর কমান্ডার আমির আলী হাজিজাদেহসহ কমপক্ষে ২০ জন সিনিয়র কমান্ডার নিহত হয়ছেন। শুক্রবার ( ১৩ জুন) দুটি আঞ্চলিক সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়ছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, শুক্রবার ভোররাতে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এ সময় তেহরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) সদর দপ্তরে হামলা হয়। এ সময় আইআরজিসির সদর দপ্তরে ছিলেন হোসেইন সালামি।
এদিকে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল হোসাইন সালামি, খাতাম-আল আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের কমান্ডার গোলাম আলী রাশিদ ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি নিহত হন।
এছাড়া ছয় বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়। তারা হলেন- আব্দুল্লাহ মিনৌচেহর, আহমাদ রেজা জলফাঘারি, সায়েদ আমির হোসেন ফাকহি, মোতলাবিজাদেহ, ফারেদুন আব্বাসি এবং মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি।
শুক্রবার ভোরে ইরানে পাঁচ ধাপে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। অজ্ঞাত এক সামরিক কমকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছেন, ইরানে শত শত হামলা চালানো হয়েছে এবং অন্তত আটটি স্থানে (শহরে) লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অপারেশন রাইসিং লায়ন’ নামে ইরানে হামলা করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের দাবি, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ব্যর্থ করে দিতে এই হামলা করা হয়। প্রাথমিকভাবে পাওয়া বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইরানের ছয়টি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে। আর ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত কয়েক ঘণ্টায় অন্তত দুটি ধাপে হামলা চালানো হয়। তবে নিশ্চিত না হলেও এখন তৃতীয় দফার হামলা চলমান থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেসব স্থানে হামলার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে- রাজধানী তেহরান ও এর আশপাশের সামরিক স্থাপনা; তেহরানের দক্ষিণে নাতানজ শহর, যেখানে ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র অবস্থিত; তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহর, যেখানে একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ও দুটি সামরিক ঘাঁটির কাছে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে; তেহরানের দক্ষিণে ইস্পাহান শহর; তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে আরাক শহর ও পশ্চিমে কেরমানশাহ শহর। ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তেহরানজুড়ে ৬ থেকে ৯টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। হামলা হয়েছে আবাসিক ভবনেও। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী এসব হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান।
পাল্টা জবাবে ইসরায়েলে শতাধিক ড্রোন হামলা চালালো ইরান : সিএনএন ঃ
অপরদিকে ভয়াবহ এই হামলার পর ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইরান। দেশটি ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে শতাধিক ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বরাত দিয়ে শুক্রবার (১৩ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। অন্যদিকে, ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে জর্ডান। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইরানের পক্ষ থেকে ১০০টিরও বেশি ড্রোন ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে। শুক্রবার এই তথ্য জানিয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র অ্যাফি ডেফরিন বলেন, “সকল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে এবং এগুলো হুমকি প্রতিহত করতে কাজ করছে। এটি একেবারে ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতিÍআমরা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হচ্ছি। তাই আমাদের ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।” ড্রোনগুলো ঠিক কোথায় আঘাত হেনেছে বা প্রতিহত করা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। তবে পরিস্থিতি যে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, সে বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। এদিকে শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের ইরান আক্রমণের পর জর্ডান সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে। জর্ডানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএআরসি) জানায়, “এটি একটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ, যা নেওয়া হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে।”সংস্থার প্রধান হাইথাম মিস্তো বলেন, এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়মনীতি ও নিরাপত্তা নির্দেশনা অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সময় অনুযায়ী এই নিষেধাজ্ঞা পর্যালোচনা করা হবে। অন্যদিকে ইসরায়েল ও ইরান উভয় দেশই ইতোমধ্যেই তাদের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুসারে, শুক্রবার ভোরে উভয় দেশের আকাশ একপ্রকার ফাঁকা ছিল, কোনও বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ চলাচল করছিল না।