ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু

# ধ্বংসস্তূপে ইসরায়েলিদের কান্না মনে করিয়ে দেয় গাজায় অসহায় লাখ লাখ নারী-শিশুর আর্তনাদের কথা #
# ইসরায়েলে ফের হতাহত ২০০ : সতর্কতা সাইরেন, বিবি এখন বাঙ্কারে লুকিয়ে
# ইরানের উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরী এক একটি মিসাইল ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বোকা বানিয়ে দিয়েছে
# ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর হুংকার, আস্ফালন শুধুই আওয়াজে পরিনত করেছে ইরান
# ইরানের ভয়াবহ হামলায় ট্রাম্প প্রশাসন চিন্তিত ; শিগগিরই ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চুক্তি হবে বলছেন ট্রাম্প
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাবাহিনী (আইডিএফ)। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি এলাকায়সাইরেন বাজানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে, ইরানের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র গুলো ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। তবে, নতুন এই হামলার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি।
এর আগে, শনিবার রাতভর পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রেখেছিল ইসরায়েল ও ইরান। এতে উভয় দেশেই বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ডাক নাম বিবি। সেই বিবি নতুন বিবির মত বাঙ্কারে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে গেছেন জীবন বাঁচাতে। ইরান যে এত উন্নত প্রযুক্তির হামলা চালাবে কল্পনাও করতে পারেনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি গতকাল সকালে ইরানকে পারমানবিক চুক্তি করতে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরান আমেরিকার কথা না শুনলে তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর ইরানের হামলা দুপুরে ও সন্ধ্যায় যে ভয়াবহ রূপ ধারন করে। মধ্য ইসরায়েল, তেলআবিব, এস্কালন ও হাইফা শহরের সুউচ্চ ভবনগুলো মুহুর্তের মধ্যে ধুলায় গুড়িয়ে যাওয়ায় ট্রাম্প সূর পাল্টান। ইরান-ইসরায়েল শিগগিরই চুক্তিতে আসছে দাবি ট্রাম্পের ঃ
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে শিগগিরই শান্তিচুক্তি হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েল একটি চুক্তি করবে, এবং খুব শিগগিরই এটা করবে ।’ ইরানের হামলার ভয়াবহতা কল্পনাও আনেনি নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প প্রশাসন। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, আমরা খুব শিগগিরই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি দেখব। অনেক কল ও বৈঠক এখন চলছে। তবে তিনি এসব আলোচনার বিস্তারিত কিছু জানাননি। এর আগে, ইসরায়েল যখন ইরানের ওপর বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে, তখনও ট্রাম্প এই আক্রমণকে ‘চমৎকার’ এবং ‘খুব সফল’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। অর্থাৎ, শুরুতে ইসরায়েলের হামলার প্রতি সমর্থন জানালেও এখন তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বিশ্লেষণ: মার্কিন প্রশাসনের কূটনৈতিক পদক্ষেপে রহস্য ও দ্বৈত বার্তা
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে রিপোর্টার রোসিল্যান্ড জর্ডান জানান, ট্রাম্পের বক্তব্যে উল্লেখ করা ‘অনেক কল ও বৈঠক’-এর বিষয়টি এই প্রথম জনসমক্ষে এসেছে। কারণ, বর্তমান মার্কিন প্রশাসন এ নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা নিয়ে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তা হলোÍ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কূটনৈতিক উপস্থিতি আংশিকভাবে সীমিত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের এই আক্রমণের সম্ভাবনা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল ওয়াশিংটন।
এছাড়া, মার্কিন সেনাবাহিনীও তাদের প্রস্তুতি কিছুটা জোরদার করেছে, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
তবে মার্কিন প্রশাসনের স্পষ্ট অবস্থান হলো, তারা ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে আর বাড়তে দিতে চায় না। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র শনিবার জানিয়েছেন, ওমানের নির্ধারিত রোববারের আলোচনাটি যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বাতিল হলেও, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আলোচনায় আগ্রহী।
ধ্বংসস্তূপে ইসরায়েলিদের কান্না ঃ
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিজ বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় প্রচ- হতবাক হয়ে পড়েছেন ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের বাসিন্দা জুলিয়া জিলবারগলৎজ। রোববার ভোরের দিকের এই হামলার ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জুলিয়া বলেছেন, তিনি এর আগে কখনই এই ধরনের হামলার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হননি।
ইসরায়েলের বাণিজ্যিক নগরী তেল আবিবের কাছাকাছি উপকূলীয় শহর বাত ইয়ামের নিজের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে বের হওয়ার সময় এএফপির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন জুলিয়া। এ সময় তিনি বলেন, ‘‘আমি আতঙ্কিত এবং স্তম্ভিত। আমি জীবনে অনেক কঠিন সময় পার করেছি, কিন্তু কখনই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি বাড়িতে ছিলাম, ঘুমাচ্ছিলাম। ক্ষেপণাস্ত্র ধেয়ে আসার বিষয়ে সাইরেনের সতর্কতার সঙ্কেত আমি শুনতে পাইনি।’’
এর পরপরই প্রচ- বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় জুলিয়ার। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরানের ওই হামলায় দুই শিশুসহ অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন; যাদের মধ্যে জুলিয়ার বাড়ির বাসিন্দারাও ছিলেন। একই শহরের আরেক বাসিন্দা ইয়েভগেনিয়া দুদকা। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়েছে তার বাড়িঘরও। তিনি বলেন, ‘‘সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। কোনও ঘর নেই। এটা সত্য।’’
ওই রাতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া হামলা-পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
রোববার ভোররাতে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র যেসব স্থানে আঘাত হানে, সেসব এলাকার ধ্বংসচিত্র ইসরায়েলি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তেল আবিব ও এর পাশের রিশন লেজিওনে শহরেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তার আগে ইসরায়েল বাহিনীর যুদ্ধবিমান ইরানের সামরিক, পারমাণবিক এবং আবাসিক এলাকায় হামলা চালায়।
ক্স অলৌকিকভাবে বেঁচে আছি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র দেশের ২২টি স্থানে আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপে সমর্থন জানিয়ে এএফপিকে এক নারী বলেছেন, ‘‘আমি জানি ইরান ইসরায়েলের জন্য খুব বিপজ্জনক এবং তারা আমাদের ধ্বংস করতে চায়।’’
তিনি বলেন, ‘‘তবে আমি এটা নিয়েও অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার হয়তো অপ্রয়োজনে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।’’ বাত ইয়ামের মেয়র জেভিকা ব্রত ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ‘‘ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এবং এতে ডজনখানেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’ তিনি বলেন, প্রাণহানির পাশাপাশি শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন এবং অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন। মেয়র জেভিকা বলেন, ‘‘হোম ফ্রন্ট কমান্ডের উদ্ধারকর্মীরা কয়েক ঘণ্টা ধরে কাজ করছেন এবং আটকে পড়া শেষ ব্যক্তিকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত তারা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করবেন।’’
বাত ইয়াম শহরের আরেক বাসিন্দা শাহার বেন সিয়ন। নিজের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করছিলেন তিনি। শাহার বেন বললেন, ‘‘আমরা বেঁচে গেছি এটা অলৌকিক এক ঘটনা।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি বেজমেন্টে যেতে চাইনি। মা জোর করে পাঠিয়েছেন…। তারপর প্রচ- বিস্ফোরণ হলো। তখন মনে হয়েছিল পুরো বাড়িটাই বুঝি ধসে পড়েছে। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় বেঁচে গেছি। এটাই অলৌকিক।’’