জাতীয় সংবাদ

সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাসীরা মধ্যপ্রাচ্যে ঘোষণা দিয়ে মারামারি করে: আসিফ নজরুল

প্রবাহ রিপোর্ট : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে আমি মিটিং করেছি। শুনেছি ওখানে প্রতিনিয়ত ঘোষণা দিয়ে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাসীরা মারামারি করে। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাপানের শ্রম বাজার: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। আসিফ নজরুল বলেন, সৌদি আরবে একটা জায়গা আছে যেই জায়গায় বাঙালিদের থেকে টাকা ছিনতাই, লুট করার জন্য বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, এমন ঘটনাও আছে। এগুলো কি মিথ্যা কথা? ওই জায়গার পুলিশকে খবর দেওয়া হয় না কেন জানতে চাইলে বলে, সে জায়গায় দোষী-নির্দোষ যারাই আছে সবাইকে বের করে দেবে। এ জন্য কাটা হাত নিয়ে আমরা অপেক্ষা করি। তিনি বলেন, এই কাজগুলো কয়জন করে? এই বাজে কাজগুলো করে ১০ জন, ভোগে ১০ হাজার লোক, ১০ লাখ লোক। সৌদি আরবে যদি ১০ হাজার লোক অত্যন্ত সুন্দরভাবে নিয়ম মেনে কাজ করে, আর যদি ১০টা লোক রাস্তাঘাটে মারামারি করে, একটা মার্ডার করে, তাহলে ১০ হাজার লোকের ভালো কাজ কেউ দেখবে না। আমাদের প্রবাসী ভাইদের সচেতন হতে হবে। কারণ এসব ঘটনা এক লাখ, ১০ লাখ লোকের জীবন বিপন্ন করে দিচ্ছে, বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিচ্ছে মাত্র ১০-২০টা লোক। ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিদেশে গেলে অনেকেই বলে অথবা পত্রিকায় দেখি বিদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সব দোষ করা হয়- সরকারের, রিক্রুটিং এজেন্সির, এই দোষ ওই দোষ! কিন্তু ওইখানে যারা আছেন তাদের কারও কারও কর্মকা- সম্পর্কে আপনারা জানেন? বাহরাইনে লোক পাঠানো বন্ধ হয়েছে, কারণ মালিকের গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। আসিফ নজরুল বলেন, বিভিন্ন দেশে আমাদের যে বদনাম, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে আমি মিটিং করেছি। আমি শুনেছি ওখানে প্রতিনিয়ত ঘোষণা দিয়ে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মারামারি করে। সৌদি আরবে একটা জায়গা আছে যেই জায়গায় বাঙালিদের থেকে টাকা ছিনতাই, লুট করার জন্য বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, এমন ঘটনাও আছে। এগুলো কি মিথ্যা কথা? ওই জায়গার পুলিশকে খবর দেওয়া হয় না কেন জানতে চাইলে বলে, সে জায়গায় দোষী-নির্দোষ যারাই আছে সবাইকে বের করে দেবে। এ জন্য কাটা হাত নিয়ে আমরা অপেক্ষা করি। তিনি বলেন, এখন এই কাজগুলো কয়জন করে। এই বাজে কাজগুলো করে ১০ জন, ভোগে ১০ হাজার লোক, ১০ লাখ লোক। সৌদি আরবে যদি ১০ হাজার লোক অত্যন্ত সুন্দরভাবে নিয়ম মেনে কাজ করে, আর যদি ১০টা লোক রাস্তাঘাটে মারামারি করে, একটা মার্ডার করে, তাহলে ১০ হাজার লোকের ভালো কাজ কেউ দেখবে না। আমাদের প্রবাসী ভাইদের সচেতন হতে হবে। কারণ এসব ঘটনা এক লাখ, ১০ লাখ লোকের জীবন বিপন্ন করে দিচ্ছে, বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিচ্ছে মাত্র ১০-২০টা লোক। বিমানের টিকিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ওমরা করতে গিয়েছিলাম। সেখানে হঠাৎ একজন ভিডিও করতে করতে বললেন, বিমানের টিকিটের এত দাম, আবার উনি (উপদেষ্টা) এসেছেন ওমরা করতে। তিনি বলেন, বিমানের টিকিট আমার মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে পড়ে না। তবু দেশে ফিরে আমি বিষয়টা প্রধান উপদেষ্টাকে জানাই। পরদিনই প্রধান উপদেষ্টা মিটিং ডেকে বিমানের টিকিটের দাম কমানোর ব্যবস্থা করেন। উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দেন, সর্বোচ্চ তিন দিন বুক রাখা যাবে টিকিট। এর মধ্যে না কিনলে বুকিং বাতিল হয়ে যাবে। বুকিং দিতে পাসপোর্টের কপি লাগবে। এমন নির্দেশনার পর দাম কমে যায়। পরে আবারও অসাধু চক্র দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ড. আসিফ নজরুল বলেন, মালয়েশিয়া যদি চুক্তি পরিবর্তন না করে, তাহলে আমার সামনে দুটি পথ খোলা আছে। একটি হচ্ছে, তাদের কথা অনুযায়ী ২৫, ৫০ বা ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে পাঠানো। আরেকটি হচ্ছে, তাদেরকে বলা যে আমরা লোকই পাঠাবো না। আসিফ নজরুল বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে আগের সরকার চুক্তি করে রেখেছে- তোমরা রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা দেবা আমরা নির্ধারণ করবো। এটা দুই পক্ষের আনুষ্ঠানিক চুক্তি। যেটাকে আমরা সিন্ডিকেট বলি। এখন আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছি- তখন আমাদের সবাই বলছে, সিন্ডিকেট করা যাবে না। এখন সিন্ডিকেট না করতে হলে চুক্তি পরিবর্তন করতে হবে। সেটা তো আপনার মালয়েশিয়া সরকারকে পিটিয়ে করতে পারবো না। এখন তার সঙ্গে আমার সমঝোতা করতে হবে। তিনি বলেন, এখন আমি যদি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লোক পাঠাই, তাহলে সবাই বলবে- আমি সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আবার যদি কর্মী না পাঠাই, তাহলে আমার ৪০ হাজার কর্মী যেতে পারবে না। এটা মালয়েশিয়া মনে রাখবে। এর ফলে পরবর্তী সময়ে আমাদের এক-দুই লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উপদেষ্টা বলেন, মালয়েশিয়ার বিষয়ে একটা হাইপ উঠছে যে, মালয়েশিয়া ১০-১২ লাখ কর্মী নেবে। আমি সেখান থেকে ঘুরে এসেছি। মালয়েশিয়া আগামী এক বছরে বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি হলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কর্মী নেবে। জাপানের শ্রমবাজারের বিষয়ে তিনি বলেন, জাপানে কর্মীর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেই চাহিদা পূরণের সক্ষমতা কি আমাদের রয়েছে! কারণ আমাদের অদক্ষ শ্রমিক আছে। ভাষা শিখতেছি, কিন্তু সে দক্ষ হতে পারছে না। এখন আমাদের সমাধান একটাই, আমাদেরকে জাপানের চাহিদা অনুযায়ী কর্মীকে দক্ষ করতে হবে। আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা ‘জাপান সেল’ করেছি। সেখানে একটা ডেডিকেটেড ওয়েবসাইট করা হবে। জাপানের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের দিক থেকে কোনও প্রক্রিয়া রাখবো না। এর পাশাপাশি কর্মীদের দক্ষ করার জন্য আমরা প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপের কথা ভাবছি। এছাড়া আমরা জাপানি উদ্যোক্তাদের বলেছি, আপনি টিটিসির (টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার) দায়িত্ব নিয়ে নেন। আপনি দায়িত্ব নিয়ে জাপান থেকে লোক এনে দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেন। আমরা পুরো টিটিসি আপনাকে দিয়ে দেবো। ইতোমধ্যে মনোহরদী টিটিসি আমরা দিয়ে দিয়েছি। এটা আমরা বলেছি, আপনারা আপনাদের মতো তৈরি করে নেন। একটা মডেল আমরা আগাচ্ছি। আরেকটা মডেল হচ্ছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আমরা বিভিন্ন পার্টনারশিপে যাওয়ার চিন্তা করছি। অনুষ্ঠান শেষ আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বাইরে কর্মসংস্থান বাড়াতে আমরা ৬টি ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে সমঝোতা করেছি। আমাদের একটা ট্যালেন্ট প্রজেক্ট আছে। ওই প্রজেক্টের মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলোতে লোক পাঠাতে স্কিল দিচ্ছি। তবে এগুলো একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। আমরা আশা করছি, আমাদের দায়িত্বকালে একটা ভালো সূচনা করে দেবো। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সরকার আসলে সেটা যদি কন্টিনিউ করে, তাহলে আমাদের ইউরোপের বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে। মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, এটা তো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে করা হয়েছে। এতে করে ব্যাপক দুর্নীতির সুযোগ করা হয়েছে। তারা যে চুক্তি সই করে গেছে, সেই চুক্তি আমাদের ওপর এক ধরনের বোঝার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এটাকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button