জাতীয় সংবাদ

সিলেটে ‘সাদাপাথর’ কেলেংকারী

৭০টি ট্রাক জব্দ, ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার
হাইকোর্টে লুটকারীদের তালিকা প্রদানের নির্দেশ
লুটকৃত পাথর সাত দিনের মধ্যে যথাস্থানে ফেলার নির্দেশ
ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলম গ্রেপ্তার

প্রবাহ রিপোর্ট : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথরে পাথর লুট ও পাচারের বিরুদ্ধে গত বুধবার রাত থেকে শুরু করে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭০টি ট্রাকে থাকা প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে নদীতে পুনরায় ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, উদ্ধারকৃত পাথরের বড় অংশ ধলাই নদীতে ফেরত দেওয়ার কাজ চলছে, যাতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়। একই সঙ্গে পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন রাঘব বোয়ালকে গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সাদাপাথর এলাকায় প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচার করে আসছে। সম্প্রতি এই লুটপাটের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে ধলাই নদীর তীরবর্তী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অবৈধভাবে উত্তোলিত সব পাথর উদ্ধার ও জড়িতদের আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত অভিযান চলবে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও পরিবেশ বাঁচাতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন, মজুত বা পাচারে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
লুট হওয়া পাথর সাত দিনের মধ্যে আগের জায়গায় ফেলার নির্দেশ হাইকোর্টের : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে সাদা পাথর লুটকারীদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে লুট হওয়া সব পাথর সাত দিনের মধ্যে আগের জায়গায় ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট এক রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এদিকে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে সাদা পাথর লুটের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে দায়ের করা আরেকটি রিটের শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। আদালতে রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট মীর একেএম নূরুন নবী। রিটে বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয় এবং সেখানে যেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়া, সিলেটের পর্যটন এলাকা ভোলাগঞ্জ থেকে সাদা পাথর লুটের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তার ব্যাখ্যা চেয়ে একটি রুল জারিরও আবেদন করা হয় রিটে।
ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলম গ্রেপ্তার : সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদাপাথর’ এলাকা থেকে বালু ও পাথর লুটপাটের ঘটনায় এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের মাহমুদ আদনান। তিনি বলেন, উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর আলমকে তার বাসা থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আলমগীর আলম জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক। এদিকে, সিলেটের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে এ অভিযান শুরু হয়। সারারাত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলে। এসব অভিযানে পাথরবোঝাই ১৩০টি ট্রাক জব্দ করা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ সাংবাদিকদের বলেন, “রাত থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। এখনো চলছে। অভিযানে জব্দ করা পাথর আবার সাদাপাথরে নিয়ে রাখা হবে। এ ছাড়া আজ কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটে পৃথক দুটি তল্লাশি চৌকি স্থাপন করে পাথর তোলা বন্ধে সার্বক্ষণিক নজরদারি শুরু হবে।” সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “বুধবার রাত পৌনে ১১টা থেকে সিলেট-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের সালুটিকর এলাকায়, পরে সিলেট ক্লাবের সামনে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে। আজ সকাল থেকে সিলেট শহরতলির বড়শালা এলাকায় যৌথ বাহিনী তল্লাশি চৌকি বসিয়ে অভিযান চালাচ্ছে।” অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে লুট হওয়া ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করে ফের সাদাপাথর এলাকাসহ ধলাই নদীর বিভিন্ন স্থানে ফেলা হয়েছে বলে জানান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button