জাতীয় সংবাদ

ফ্লোটিলা থেকে শহিদুল আলমের সর্বশেষ পোস্ট

ধন্যবাদ জানাল ফিলিস্তিন দূতাবাস

# বুকে দীপ্ত লাল সূর্য আর শহীদ আবু সাঈদ #

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ বুকে বাংলাদেশের দীপ্ত লাল সূর্য। তার ওপর দু’হাত প্রসারিত বীর শহীদ আবু সাঈদের ছবি। আর হাতে বাংলাদেশের পতাকা। বিশ্ব যেখানে যেতে ভয় পায় অথবা নত হয়ে থাকে, সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাজা সুমুদ ফ্লোটিলায় এমনভাবেই বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের অধিকারকর্মী শহিদুল আলম। ইসরাইলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তারা গাজায় অভুক্ত মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ছুটে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই নৌবহরে হামলা করেছে ইসরাইল। আটক করেছে দুই শতাধিক অধিকারকর্মীকে। তার মধ্যে শহিদুল আলম আছেন কিনা তা নিশ্চিত জানা যায়নি।
তবে তিনি কিছুক্ষণ আগে মোসাব আবু তোহা’র একটি এক্স পোস্ট শেয়ার করেছেন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে। ওই পোস্টে তোহা লিখেছেন, নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফ্লোটিলায় করে সাহায্য পৌঁছে দিতে চেয়েছেন মানবতাবাদী সাহায্যকর্মীরা। এ কাজে তাদের নিজেদের সরকার ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সেই সাহসী মানবতাবাদীরা সমুদ্রে অবৈধভাবে আটক হওয়ার পরও অন্তত সেই একই সরকারগুলোর কাছে ফিরে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। এটা উপেক্ষা করা যায় না। কিন্তু আমরা, গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা, কোনো সুরক্ষা পাই না। যখন আমরা হারিয়ে যাই-হোক তা হাসপাতালের শয্যা থেকে তুলে নেয়া, আমাদের ঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া, কিংবা অস্থায়ী তাঁবুতে জীবন্ত পুড়ে যাওয়া-আমরা যেন কোনো চিহ্ন ছাড়াই মিলিয়ে যাই। আমার হৃদয় ভেঙে যায় আমার জাতির জন্য: যারা হারিয়ে যায় নাম ছাড়াই, ছবি ছাড়াই, কবর ছাড়াই, আর গণমাধ্যমের চোখের আড়ালে। একবার তারা চলে গেলে, তারা আর নেই।
এদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ মিডিয়া ফ্লোটিলায় যোগ দেওয়ায় বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমের ভূয়সী প্রশংসা করেছে ঢাকার ফিলিস্তিনি দূতাবাস।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ফিলিস্তিনি দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে গর্বের সাথে ধন্যবাদ জানাই, যিনি গ্লোবাল সুমুদ মিডিয়া ফ্লোটিলায় যোগ দিয়েছেন। গাজায় ইসরাইলের অবৈধ অবরোধ ভাঙার এই ঐতিহাসিক মিশনে অংশ নেওয়া প্রথম বাংলাদেশি তিনি। ন্যায়বিচারের জন্য তার নির্ভীক কণ্ঠস্বরের জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এই সাহসী অভিযানে অংশগ্রহণ করায় বাংলাদেশে অবস্থিত ফিলিস্তিন দূতাবাস তাকে সম্মান ও ধন্যবাদ জানিয়েছে।
গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম গাজা ফ্লোটিলায় যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন। ঢাকার শুক্রাবাদে দৃকপাঠ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গাজা উপত্যকায় চলমান নৃশংসতার বিষয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের নীরবতা ভাঙতে আন্তর্জাতিক সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) উদ্যোগে পরিচালিত ‘মিডিয়া ফ্লোটিলা’ অভিযানে অংশ নিতে যাচ্ছেন তিনি।
গ্লোবাল মিডিয়া ফ্লোটিলাতে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে গণহত্যা চলছে। ইসরায়েল ও আমেরিকা একসঙ্গে ফিলিস্তিনে, গাজায় মানুষ খুন করছে। তার সঙ্গে পাশ্চাত্যের অনেকগুলো দেশ যুক্ত; তারাও সহযোগিতা করছে এবং তারাও এতে অংশীদার।’
পরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ইতালির উদ্দেশে রওনা হন শহিদুল আলম। এরপর গত মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ইতালির ওট্রান্টো থেকে ফ্লোটিলার বৃহত্তম জাহাজ ‘কনসায়েন্স’-এ যোগ দেন তিনি।
যোগ দেওয়ার পর এক বার্তায় তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ থেকে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে গাজায় যাচ্ছি। কিন্তু বাংলাদেশের সকল মানুষের ভালোবাসা আমার সাথে বহন করছি। গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যা। এই সংগ্রামে যদি আমরা পরাজিত হই, তাহলে মানবতা নিজেই পরাজিত হবে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, নৌবহর ইসরাইলের ঘোষিত ‘বিপৎসীমায়’ প্রবেশ করেছে যা গাজার উপকূল থেকে প্রায় ২২৫ কিলোমিটার বা প্রায় ১২১ নটিক্যাল মাইল দূরে। আগেরবারের ফ্লোটিলাগুলোকে এখানেই আটকানো বা আক্রমণ করা হয়েছিল।
ইসরায়েল এবারও তাদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে তেমন পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আয়োজকরা। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ নৌবহর আটকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগের মতোই নৌবহরের শত শত কর্মীকে আটক করে তীরে আনার পর নির্বাসিত করা হতে পারে। কিছু জাহাজ সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অভিযান বুধবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শুরু হওয়া ইহুদিদের পবিত্রতম দিন ইয়ম কিপ্পুরের সময় শুরু হতে পারে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button