জাতীয় সংবাদ

রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গাজার জলসীমায় ফ্লোটিলা নৌ-বহর

দলখদার ইসরাইলের ‘কাপুরুষোচিত’ হামলা
বিশ্বজুড়ে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ-নিন্দা-ঘৃণার ঝঁড়

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা অভিমুখী আন্তর্জাতিক সহায়তা বহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ নৌযানগুলোর মধ্যে একটি ইতোমধ্যেই গাজার জলসীমায় প্রবেশ করেছে। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’র লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী ‘মিকেনো’ নামের ওই নৌযানটি বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) গাজার উপকূলে ঢুকে যায়। তবে এটি ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। সূত্র: আল-জাজিরা
এদিকে, দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ নৌ-বহরে ‘কাপুরুষোচিত’ হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্বজুরে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ ও নিন্দা-ঘৃণার ঝঁড় উঠেছে।
আক্রমণাত্মক বাধাদানের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আয়োজকরা দাবি করেছেন, অনেক জাহাজ গাজায় পৌঁছাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা এই মিশনকে দীর্ঘস্থায়ী সমুদ্র অবরোধ ভাঙার একটি প্রতীকী প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
নৌবহর সূত্রে জানা যায়, ১ অক্টোবর ক্যামেরা বন্ধ এবং জিপিএস সিগন্যাল বিঘিœত হওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি জাহাজের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জাহাজগুলো বাধাগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে একটি ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া ইসরাইলি বাহিনী বোর্ডিং অভিযানও চালিয়েছে।
বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে, বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করে নৌযান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ‘ডন’-এর খবরে বলা হয়েছে, নৌবহর ঘোষণা করেছে, তাদেরকে ‘বেআইনীভাবে আটক’ করা হয়েছে এবং কমপক্ষে তিনটি জাহাজে আক্রমণ করা হয়েছে।
ফ্লোটিলা আরও জানায়, ইতোমধ্যে তারা ২০টিরও বেশি অজ্ঞাতনামা জাহাজকে কাছাকাছি আসতে দেখেছে, যা নৌ অবরোধ শুরুর ইঙ্গিত বহন করে।
এপি জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী গাজা থেকে প্রায় ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে নৌবহরের ১৯টি জাহাজ আটকে দিয়েছে। কয়েকজন কর্মী বর্ণনা করেছেন, এই বাধা প্রক্রিয়ায় নৌবাহিনীর সতর্কবার্তা, বাজেয়াপ্তের হুমকি এবং ওয়াটার ক্যাননের ব্যবহার ছিল। বাধা সত্ত্বেও বহু নৌযান সামনে এগোচ্ছে বলে জানা গেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ফ্লোটিলা গাজার উপকূল থেকে প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইলের কাছাকাছি পৌঁছালে ভোর হওয়ার আগেই অজ্ঞাত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন জাহাজগুলো নৌবহরের কাছে আসে। এরপর তারা আক্রমণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে এবং নৌবহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফ্লোটিলা ড্রোন হামলা (স্টান গ্রেনেড ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে) এবং সংকেত দমনের অভিযোগ করেছে। তবে ইসরাইল প্রকাশ্যে এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেনি।
রয়টার্সের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়োজকরা জানায়, ত্রাণবহনকারী ১৩টি নৌকা আটকে দেওয়া হয়েছে। তবে আরও ৩০টি জাহাজ এখনো গাজার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আটককৃতদের মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থানবার্গও ছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা এই বাধাগুলোকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় সামুদ্রিক আইন লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছেন। ঘটনাটি বৈশ্বিক কূটনৈতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, নৌপথে হয়রানির শিকার হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন ফ্লোটিলার সদস্যরা। তাদের অভিযোগ, ইসরাইলি নৌযানগুলো ত্রাণবাহী জাহাজগুলোকে ঘিরে ধরে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল এবং প্রায় ১৪০ মাইল সমুদ্র উপকূলে নৌবহরটিকে নিয়ে গিয়েছিল।
পত্রিকাটি জানিয়েছে, ইতালি এবং গ্রীস ইসরাইলকে নিরাপদ যাত্রাপথের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে আয়োজকরা গির্জা বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিকল্প সরবরাহের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জোর দিয়ে বলছেন, সরাসরি সমুদ্রপথে সাহায্য পৌঁছানোই এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।
অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যাত্রার শুরুতে ফ্লোটিলার দুর্বলতাগুলোও নিশ্চিত হয়েছে। এপি জানিয়েছে, গ্রিসের দক্ষিণে ফ্লোটিলার জাহাজ ড্রোন হামলার শিকার হয়েছিল, ফলে বিস্ফোরণ এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে এ আক্রমণ মিশনটিকে নতুন ধরনের ঝুঁকিতে ফেলে।
এর আগেও তিউনিসিয়ার জলসীমায় সিদি বো সাইদে নোঙর করা পর্তুগিজ পতাকাবাহী নৌবহরের ড্রোন হামলার অভিযোগের খবর প্রকাশ করেছে রয়টার্স। ওই জাহাজটিতে আগুন লাগে, তবে সবাই অক্ষত ছিলেন। দেশটি ড্রোন হামলার ঘটনা অস্বীকার করেছে।
ফ্লোটিলার সমন্বয়কারী সংস্থা সুমুদ নুসান্তারা কমান্ড সেন্টার (এসএনসিসি) জানিয়েছে, দুটি প্রধান জাহাজ আলমা এবং সিরিয়াসকে একটি সামরিক জাহাজ দ্বারা ঘিরে ফেলা হয়। এতে তাদের সিসিটিভি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘিœত হয়। এসএনসিসি এই ঘটনাকে পরিকল্পিতভাবে ভয় দেখানোর প্রচেষ্টা হিসাবে বর্ণনা করেছে।
মালয়েশিয়ার দ্য স্টার জানিয়েছে, একটি ইসরাইলি যুদ্ধজাহাজ আলমার মাত্র পাঁচ ফুট দূরত্বে ছিল এবং সিস্টেমে বাধা সৃষ্টি করেছিল। তবে পরে সেটি চলে যায়।
এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে স্পষ্ট ঘোষণা করেছে, গাজার যেসব এলাকায় এখনও যুদ্ধ চলছে সেখানে জাহাজ ঢুকতে দেবে না এবং নৌ-অবরোধ প্রত্যাহার করবে না। তারা বিকল্প পথ হিসেবে গাজার সাহায্য পৌঁছে দিতে অ্যাশকেলন মেরিনায় জাহাজ থামানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
এ ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ ১৫টি দেশ যৌথ বিবৃতিতে ফ্লোটিলার সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। বেলজিয়াম ড্রোন হামলার তদন্তের দাবি তুলেছে, আর মালয়েশিয়া নিরাপদ সমুদ্রপথ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী ১৩টি জাহাজ থামিয়েছে এবং ২শ’র বেশি মানুষকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থানবার্গও রয়েছেন।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী মিকেনো নামে একটি জাহাজ বর্তমানে গাজার জলসীমায় রয়েছে। তবে ইসরাইলি বাহিনী সেটিকে আটক করেছে কি না তা এখনো জানা যায়নি।
ইসরাইলি কমান্ডোরা ফ্লোটিলা নৌযানগুলোতে বাধা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে বহরে সক্রিয় জাহাজের সংখ্যা ২৪টি, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি গাজার জলসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।

এই পটভূমিতে বাংলাদেশের ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমের অংশগ্রহণ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ফ্লোটিলার অভিযানের গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে। আলম জানিয়েছেন, তিনি ‘বাংলাদেশের সকল মানুষের ভালোবাসা সঙ্গে নিয়ে’ অংশ নিচ্ছেন এবং গাজার পরিস্থিতি গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আইনগত দিক থেকে, ফ্লোটিলা ও ইসরায়েলের সংঘর্ষ নিয়ে কিছু জটিল প্রশ্ন উঠেছে। যেমন, আন্তর্জাতিক জলে বেসামরিক জাহাজ আটক করা কি ঠিক, অবরোধ কতটা বৈধ ও সঠিকভাবে হয়েছে, এবং নিরপেক্ষ জাহাজের অধিকার কী হবে।
যদিও ইসরাইল বলছে, নিরাপত্তার জন্য এই অবরোধ প্রয়োজন। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি সাধারণ মানুষের ওপর দমন ও মানবিক নীতির লঙ্ঘন।
ফ্লোটিলা এখন গাজার ১২০ নটিক্যাল মাইলের কম দূরত্বে অবস্থান করছে। এলাকাটিকে আয়োজকরা ‘উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ অবস্থায় বহরের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাহাজগুলো কি জোরপূর্বক আটক হবে, গ্রেফতার করা হবে, নাকি আংশিকভাবে স্থলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে? তবে আয়োজকরা বলছেন, সব ঘটনার তথ্য লাইভ রেকর্ড করা হচ্ছে যাতে যে কোনো আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ সামনে আনা যায়।
ত্রাণবাহী নৌবহরটি গাজা উপকূলে পৌঁছাক কি না, তা এখন আর মূখ্য বিষয় নয়। ইতিমধ্যেই এই অভিযান অবরোধকে চ্যালেঞ্জ করে বিশ্বজুড়ে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে সমুদ্র সংঘর্ষের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
এদিকে, ত্রাণ পৌঁছে গাজার অবরোধ ভাঙার শপথ নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে উপকূলে যাওয়া সুমুদ ফ্লোটিলার একটি ছাড়া সব নৌযান জব্দ করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করা বা আইনসম্মত নৌ-অবরোধ লঙ্ঘন করার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।’
ইসরায়েলি মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ‘আর একটি জাহাজ রয়েছে। সেই জাহাজ যদি সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করে অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করে, তবে সেটিকেও জব্দ করা হবে।’ খবর আলজাজিরার।
ইসরায়েলি মন্ত্রণালয় আরো জানায়, ‘সব যাত্রী নিরাপদে ও সুস্থ আছেন। তাদেরকে নিরাপদে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের ইউরোপে ফেরত পাঠানো হবে।’
এদিকে ইসরায়েলি নৌবাহিনী গাজা উপত্যকার উদ্দেশে যাওয়া আন্তর্জাতিক সহায়তা বহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আক্রমণ করে অন্তত ৩১৭ জন কর্মীকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিষয়টি জানিয়েছে ফ্লোটিলার আয়োজকেরা। তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের ইউরোপে ফেরত পাঠানো হবে।
ফ্লোটিলাটি আগস্টের শেষ দিকে যাত্রা শুরু করে। এতে মূলত মানবিক সাহায্য ও চিকিৎসাসামগ্রী ছিল। একসঙ্গে ৫০টির বেশি জাহাজ গাজার উদ্দেশে যাত্রা করে। এতে ৪৫টির বেশি দেশের ৫৩২ জন বেসামরিক সমর্থক ছিলেন। প্রায় ১৮ বছর ধরে গাজায় অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। চলতি বছরের মার্চে তারা সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ বন্ধ করে অবরোধ আরও কঠোর করে। এতে পুরো অঞ্চল দুর্ভিক্ষের মুখে পড়ে।
গাজামুখী মানবিক নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলের হামলা ও মানবাধিকারকর্মীদের আটকের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মালয়েশিয়ার পর ইসরায়েলি এই হস্তক্ষেপকে সন্ত্রাসী কর্মকা- হিসেবে আখ্যা দিয়েছে তুরস্ক।
গাজামুখী ত্রাণ বহর আটকে দেয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে স্পেন, ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক ও গ্রিসসহ বহু দেশে। আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো ও কলম্বিয়ায় রাস্তায় নেমেছে মানুষ। গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে রওয়ানা দেয়া নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে ইসরায়েলি বাধার মুখে পড়ে।
বহরের বেশ কয়েকটি জাহাজ থামিয়ে তাতে উঠে পরে ইসরায়েলি নৌ সেনারা। বন্ধ করে দেয়া হয় নৌযান থেকে চলা সরাসরি সম্প্রচার। পরে নৌযানে থাকা মানবাধিকার কর্মীদের আটক করে সেখানেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে আছেন সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও।
সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আটককৃতদের ইসরায়েলের একটি নৌ বন্দরে নেয়া হচ্ছে। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, নৌবহরের অন্তত ১৩টি জাহাজ আটক করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। জাহাজগুলোতে থাকা দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবককে আটক করে ইসরায়েলের একটি বন্দরে নেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে ‘ভীতি প্রদর্শন ও জবরদস্তি’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় খাদ্য ও জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বাধা দিয়ে ইসরায়েল মানবতার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে। ফ্লোটিলার আটক হওয়া ১৩টি জাহাজে ১২ জন মালয়েশীয় নাগরিকও রয়েছেন।
এদিকে, তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে ফ্যাসিবাদী ও সামরিকতাবাদী নীতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা আটক হওয়া তুর্কি নাগরিকদের মুক্তির দাবিতে আইনি পদক্ষেপ নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস ঘটনাটিকে শান্তিপূর্ণ মানবিক উদ্যোগের ওপর হামলা আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ফ্লোটিলার সদস্যদের আন্তর্জাতিক আইন মেনে আচরণ করতে হবে। একই সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ফ্লোটিলায় থাকা আইরিশ নাগরিকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফরাসি সদস্য এমা ফুরো বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ করো, বৈশ্বিক অর্থনীতি পঙ্গু করে দাও, গাজার অবরোধ ও গণহত্যা শেষ করো। এমা নিজেও ফ্লোটিলার একটি জাহাজে অবস্থান করছেন।
গাজামুখী ফ্লোটিলায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন বড় শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা আটক হওয়া কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন। ইসরায়েলের হাতে আটক হওয়া জাহাজগুলোর একটিতে রয়েছেন আর্জেন্টাইন আইনপ্রণেতা সেলেস্ট ফিয়েরো।
বিক্ষোভ হয়েছে আঙ্কারা, মেক্সিকো সিটি, বোগোতা, এবং মাদ্রিদের রাস্তায়ও। তারা ইসরায়েলের হামলা ও কর্মী আটককে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা গাজার মানুষের জন্য অবরোধ ভাঙতে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোরও দাবি জানান। ইসরায়েলি হামলার পর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের মানবিক মিশন থেমে থাকবে না।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button