জাতীয় সংবাদ

প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ নিয়োগ এনটিআরসিএর মাধ্যমে: শিক্ষা উপদেষ্টা

প্রবাহ রিপোর্ট : বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার। তার ভাষ্য, “এনটিআরসিএর মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।” গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বিশ^ শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বিশ^ শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর মন্ত্রণালয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। আমাদের লক্ষ্য একটিই-মানসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও মানবিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। আধুনিক বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে আমরা তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ, উদ্ভাবনী ও বৈশি^ক প্রতিযোগিতার উপযোগী,নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। “নৈতিকতার চর্চার পাশাপাশি আমরা পরিবেশ সচেতনতা ও পরমত সহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে কাজ করছি। কারণ, শিক্ষিত মানুষ মানে শুধু বইপড়া মানুষ নয়; শিক্ষিত মানে সহনশীল, দায়িত্বশীল ও মানবিক মানুষ বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে আমরা লাইফ স্কিল, ভাষা শিক্ষা এবং পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদেরকে শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, জীবনের জন্য প্রস্তুত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।” শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সি আর আবরার বলেন, “বিগত সময়ের বিভিন্ন আন্দোলন ও দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে আমরা বাস্তবসম্মত ও ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। নির্ভুল ও মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে; এনসিটিবির বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলমান ইউজিসির কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চলছে। “উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে উন্মুক্ত দরখাস্তের মাধ্যমে স্বচ্ছ নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ, শে^তপত্র ও টাস্কফোর্সের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে কার্যকর বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।” তিনি বলেন, “প্রান্তিক পর্যায়ে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে। এসএসসিতে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে আমরা অতিরঞ্জিত ফল প্রকাশ না করার নীতি গ্রহণ করেছি এবং বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মেধা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করেছি। “কারিগরি শিক্ষার নতুন রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং শিগগিরই কনসালটেশন কমিটির মাধ্যমে সেকেন্ডারি লেভেলের রূপরেখা প্রণয়ন চূড়ান্ত করা হবে। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কল্যাণ ট্রাস্ট ও বোর্ডগুলোকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যানবেইস প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উচ্চতর গবেষণার পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এনটিআরসিএর মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।” এতদিন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পর্যায়ের শিক্ষক ও প্রভাষক পদে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করার দায়িত্ব এনটিআরসিএর হাতে থাকলেও প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান ও কর্মচারী পদে নিয়োগের ক্ষমতা ছিল পরিচালনা পর্ষদের হাতে। পরিচালনা পর্ষদ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা হারানোর পর এবার প্রধান ও অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষমতাও হারাচ্ছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর এনটিআরসিএ আয়োজিত এক কর্মশালায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেছিলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে সরকারের তদারকিতে নিয়োগ সুপারিশ প্রক্রিয়া পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় বা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে তা নির্ধারণে কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটি এটা ঠিক করবে, এ পদগুলোতে কোন আদলে নিয়োগ হবে। বিশ^ শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “শিক্ষক সমাজ মানবতার আলোকবর্তিকা, সভ্যতার নির্মাতা এবং জাতির বিবেক। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়-জ্ঞান, নৈতিকতা ও মানবিকতার চর্চায় শিক্ষকের ভূমিকা কতটা অনন্য ও অপরিসীম। একজন শিক্ষক হিসেবে আজ এই দিনে শিক্ষক সমাজের সামনে কিছু বলতে পারা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের। “আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বেশ কয়েকটি ধারা বিদ্যমান। তাই প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি আর পরিবর্তন নিয়ে অনেক আলোচনার সুযোগ আছে। তবে দেশের স্বার্থ আর এই দেশের নাগরিক এর চাহিদার প্রাধান্য পেতেই হবে। শিক্ষকতা পেশা এমনই এক মহান পেশা যা জাতি গঠনের সাথে জড়িত।” শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “অনলাইন বদলি, ই-ফাইলিং এবং এডুটেকের মাধ্যমে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা কার্যক্রমের মানোন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। উচ্চ শিক্ষায় অ্যাকসেস টু গ্লোবাল নলেজ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছি। “টিমস ও লানাতে যোগদানের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক বেঞ্চ মার্কিং এ যোগদানের দ্বারপ্রান্তে আছি। শত চ্যালেঞ্জ এর মধ্যে ও এই যাত্রা আমাদের নতুন দিগন্তে মিলিত হতে সহায়তা করবে।” বিশ^ শিক্ষক দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে ১২ গুণী শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হয়। পুনস্কৃতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, “আপনারাই শিক্ষার আসল কারিগর, জাতি গঠনের স্থপতি। আমরা শিক্ষকদের পদোন্নতি ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছি। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধি এবং আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। “শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাড়াতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেয়ালিকা, বিতর্ক, গার্ল গাইড, বয় স্কাউট কার্যক্রমকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।” মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুজান ভাইজ, ইসলামিক ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশনের (আইসিইএসসিও) মহাপরিচালক সালিম এম আল-মালিক। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক গোলাম মুস্তফা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button