ইসিকে ভাগ করে নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত-উপদেষ্টারা: নাসির পাটওয়ারী

প্রবাহ রিপোর্ট : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মূখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া গনিমতের মাল হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ভাগ করে নিয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও উপদেষ্টারা। তাই ইসিকে রুলস রেগুলেশনের মধ্যে আসতে হবে। গতকাল রোববার নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন। দলের প্রতীকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পাটওয়ারী বলেন, নির্বাচন কমিশনে আসতে আসতে আমাদের জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। এই গণঅভ্যুত্থানটা যে হলো, এখানে কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেকগুলো এসেট তারা রেখে চলে গিয়েছিল। এই নির্বাচন কমিশনটা ১৫ বছর তারা নিজেদের মতন সাজিয়েছিল। এই যে তারা গনিমতের মালগুলো রেখে গিয়েছিল, সেই গনিমতের মালগুলো উপদেষ্টা-বিএনপি-জামায়াত সবাই ভাগ করে নিয়েছে। রাষ্ট্রের বর্তমান যা অবস্থা, এই ইলেকশন কমিশনও তারা গণিমতের মাল হিসেবে ভাগ করেছে। আর্মি এক ভাগ নিয়েছে, বিএনপি এক ভাগ নিয়েছে, জামায়াত এক ভাগ নিয়েছে। কিন্তু আমরা তো জনগণের একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে দেখতে চাই। এজন্য আমরা ওনাদের বলেছি যে এটা তিন চার দল বা আর্মির অথবা ডিজিএফআইয়ের একটা আপনি গণিমতের মাল হিসেবে দেখবেন না, যে আওয়ামী লীগ রেখে গিয়েছিল, পুরা নির্বাচন কমিশন খালি। রুলস রেগুলেশনের মধ্যে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে যারা কলঙ্কিত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, তাদের আদালতের পর্যবেক্ষণে আনা হয়েছে এবং তাদের সেখানে তারা গৃহবন্দী হয়েছে। কিন্তু গত ১৫ বছরে সেই সব ব্যক্তির মধ্যে যেমন জিয়াউল আহসান, সেও এই নির্বাচন কারচুপি থেকে শুরু এই প্রতিষ্ঠানটা ধ্বংসের মধ্যে অন্যতম কারিগর ছিল। সেখানে তারও বিচারের কথা রয়েছে। তেমনিভাবে আজকে আমরা বলেছি, গত ১৫ বছরে এখানে যারা নির্বাচন কমিশনে এ সব কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনতে। কিন্তু ওনারা আমাদের যে উত্তরটা দিয়েছেন, নতুন কোনো রিক্রুটমেন্ট হয় নাই। ফলে ইন্টারচেঞ্জ করেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আগের যে পরিস্থিতিতে ছিল, সেই পরিস্থিতিতে রয়েছে। এ বিষয়গুলো আমরা উল্লেখ করেছি। তাদের নজরে এনেছি। এনসিপি নেতা আরও বলেন, গণতান্ত্রিক যে যাত্রায় আমরা নির্বাচন কমিশনকে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের কাছে দিতে চাই না। কোনো ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের কাছেও দিতে চাই না। অথবা কোনো ফ্যামিলির কাছেও আমরা এই নির্বাচন কমিশন বর্গা দিতে চাই না। আমরা চাই, নির্বাচন কমিশনটা জনগণের হবে। এজন্য আমরা জুতার তলা ক্ষয় করে হলেও বারবার এই নির্বাচন কমিশনের কাছে আসি। আপনাদের সামনে দাঁড়াই। আমরা বলেছি যে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করুন। স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাখুন। আপনারা জিয়া ফ্যামিলি না, মুজিব ফ্যামিলি না, রহমান ফ্যামিলি না, কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম না। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, রাষ্ট্রের যখন কোনো সেক্টরে নিরাপত্তা নাই, তাহলে আপনি কোন ভিত্তিতে একটি ইলেকশনের মধ্যে যাচ্ছেন। নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা অনেকগুলো ইস্যু চলমান রয়েছে। গতকালকে (গত শনিবার) আগুন (বিমানবন্দরে) লেগেছে। এর আগেও কার্গো ডুবে গিয়েছিল। অনেকগুলো জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু রয়েছে। তাই জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে জানান দিচ্ছি বাংলাদেশ খুব ভালনারেবল সিচুয়েশনে রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুর মতো অথবা জাতীয় ক্ষেত্রে যদি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে এ সরকার। তাহলে তারা একটি বাংলাদেশের ক্রেডিবল ইলেকশন কীভাবে করবে। সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখছি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের গুদামের যে সম্পদ রয়েছে, যদি কেউ এসে তা জ্বালিয়ে দেয় অথবা রাস্তার মধ্যে যারা আমাদের শিক্ষক সমাজ রয়েছেন তারা এখনো নিজেদের একটি চাকরির জন্য ঘোরাফেরা করছেন। তাদেরও কোনো নিরাপত্তা নাই। বাংলাদেশের যারা ব্যবসায়ী শ্রেণি তারা বিদ্বেষের মধ্যে রয়েছেন। তাহলে রাষ্ট্রের যখন কোনো সেক্টরে নিরাপত্তা নাই, তাহলে আপনি কোন ভিত্তিতে একটি ইলেকশনের মধ্যে যাচ্ছেন? বাংলাদেশের যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে তারা যদি নিরাপত্তা না দিতে না পারে, তাহলে আমরা মনে করি বাংলাদেশের একটি ক্রেডিবেল ইলেকশন হওয়া পসিবল না। তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে আলোচনা করেছি। আমাদের দেড় কোটি ভোটার রয়েছে তারা প্রবাসী ভোটার। এখানে মৃত ভোটার রয়েছে। এ দেড় কোটি ভোটার তারা কী আওয়ামী লীগে দেবে, নাকি বিএনপির প্রার্থী গিয়ে সেই ভোটগুলো সিল দেবে, নাকি জামায়াতে দেবে-এ বিষয়ে আমরা তাদের কাছে প্রশ্ন তুলেছি। তারা বলেছে এ বিষয়ে তারা কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কমিশন সম্পূর্ণরূপে মৃত ভোটার ভোটার লিস্ট থেকে বাদ দিতে পারে নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৃত ভোটার যদি ভোটার লিস্ট থেকে বাদ দিতে না পারে তাহলে এটা জনগণের একটি ইলেকশন হবে না। এটা একটি লোক দেখানো নাটকে পর্যবেশিত হবে। এজন্য আমরা তাদের বলেছি একটি ক্রেডিবেল ভোটার লিস্ট লাগবে। তারা বলেছে অক্টোবরের ফাস্ট-এর মধ্যে তারা একটি ভোটার লিস্ট সম্পূর্ণ করবে। তিনি বলেন, ইলেকশন কমিশনের টেন্ডার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় এনআইডি কার্যক্রম নিয়ে অনেক দুর্নীতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত হয় সেই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, ফেয়ার ইলেকশন দেওয়া বাংলাদেশে পসিবল না। আরেকটি বিষয় হলো আমরা দেখেছি গত ১৫ বছরে অনেক স্কুল-কলেজ বিভিন্ন জায়গায় তারা হেডমাস্টার হয়েছিল, কর্মকর্তা হয়েছিল তারা আওয়ামী লীগের নিয়োগ প্রাপ্ত ছিল। এবং সেখানে উইদাউট এনি মেরিট বেস পরীক্ষা ছাড়া তারা নিয়োগ হয়েছিল। তারাই যদি ইলেকশনে অংশগ্রহণ করে এবং তারাই যদি ওভারসি করে বা সেখানে দায়িত্ব থাকে আমরা মনে করি না ইলেকশন ক্রেডিবল হবে। আমরা অনেকগুলো বিষয়ে অভিযোগ করেছি। যেই বিষয়গুলো সমাধান হলে আমরা আসলে একটি ডেমোক্রেটিক স্টেটে যেতে পারবো। যদি ওনারা না করেন তাহলে তো ওনাদের অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। এ ইলেকশনে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি বলেন, বিএনপি যে গণতন্ত্র বলে, এ গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে আসলে জিয়া ফ্যামিলির কয়েকটা লোক ক্ষমতায় যেতে চায়। পিপলের এম্পাওয়ারমেন্ট হয় না। জামায়াতে ইসলামী যে গণতন্ত্র বলে জামায়াতের ইসলামীর এক দুই লাখ নেতাকর্মী ক্ষমতায় যেতে চায়। আমরা যে গণতন্ত্র বলি সেই গণতন্ত্র আমরা পিপলের পাওয়ারম্যান চাই এবং এজন্য আমরা লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছি। শাপলা প্রতীক না পেলে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে পাটওয়ারী বলেন, তারা আগে যেটা বলেছিল যে, শাপলা নাকি জাতীয় প্রতীক। তারা বলেছিল যে, লিগাল বাইন্ডিং আছে। সেগুলোর জবাবগুলো আমরা তাদের সরাসরি এসে দিয়েছি। সেই জায়গা থেকে তারা সরেছে এবং কনভিন্স হয়েছে। কিন্তু এখন তারা নতুন যুক্তি দাঁড় করিয়েছে, যে এটা এনলিস্টেড না। এখন তারা এনলিস্টেড কেন নাই অথবা এনলিস্টেড তারা কোন নীতিমালা অনুযায়ী এতদিন করেছে সে বিষয়ে আমরা ব্যাখ্যা চেয়েছি। আমরা এখন আশা করি পাব। ইনশাআল্লাহ আমরা শাপলা নিয়ে ইলেকশন করব। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির এ নেতা বলেন, যদি করাপশন ফ্রি না করতে পারে, ইসি যদি মৃত ভোটার লিস্টের সঠিক সমাধান না করতে পারে এ বিষয়গুলো সমাধান না করতে পারে অবশ্যই তাদের পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনে যদি কেউ বসে রেস্ট নেয়। আপনারা জানেন নির্বাচন কমিশনের অনেকেই প্রবাসী ভোটারের নামে বিদেশে আমোদ, প্রমোদে ব্যস্ত। তারা বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের যারা ডায়াসপোরা রয়েছে তাদের থেকে আমরা খোঁজ নিয়েছি সেখানে যাইয়া মিটিং করে পায়ের উপর পা ধুলিয়ে। সেখানে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশে যদি এ নির্বাচন কমিশন যদি সদিচ্ছা নিয়ে কোনো দলদাস না হয়ে, কোনো ক্যান্টনমেন্টের দাস না হয়ে এক মাসও কাজ করে, বাংলাদেশে একটা ক্রেডিবল ইলেকশন দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তারা সেই চ্যালেঞ্জটা ফেস করবে কিনা এ সৎ সাহস আমরা মনে করি ইলেকশন কমিশনের এখনো নাই। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।