শাপলা প্রশ্নে অনড় এনসিপি : ইসির কাছে লিখিত ব্যাখ্যার দাবি

প্রবাহ রিপোর্টঃ দলীয় প্রতীক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শাপলাতেই অনড় অবস্থানে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। একইসঙ্গে প্রতীক অন্তর্ভুক্তি বা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের বিদ্যমান নীতিমালা বা মানদ- কী, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে লিখিত ব্যাখ্যার দাবি জানিয়েছে দলটি। যদিও ইসির পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে, সংরক্ষিত প্রতীকের তালিকা থেকে একটা প্রতীক নিতে হবে। যেখানে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯(১) মোতাবেক প্রার্থীত প্রতীক ‘শাপলা’ অন্তর্ভুক্ত নেই। রবিবার (১৯ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের কাছে এমন লিখিত দাবি জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সম্প্রতি বিধিমালায় থাকা ৫০টি প্রতীক থেকে নিজেদের প্রতীক বাছাই করে জানানোর জন্য ইসির দেওয়া চিঠির জবাবে এই দাবি করলো এনসিপি। চিঠিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, “গত ২২ জুন এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন দাখিল করে এবং দলের অনুকূলে ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানায়। এই আবেদন দাখিলের আগে এবং পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এনসিপির প্রতিনিধিদল ধারাবাহিকভাবে দফায় দফায় বৈঠকে মিলিত হয়েছে এবং শাপলা প্রতীকের ব্যাপারে দলের অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেছে।” আলোচনার অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় এনসিপি গত ৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ৭ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন বরাবর আলাদা আলাদা দরখাস্ত দাখিল করেছে এবং পার্টির অনুকূলে প্রতীক ১. শাপলা ২. সাদা শাপলা এবং ৩. লাল শাপলা বরাদ্দ দিতে অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়াও শাপলাকে প্রতীক হিসেবে দৃশ্যমান করার ক্ষেত্রে শাপলার ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন বা আংশিক ডিসটর্টেট ভার্সন গ্রহণ করা, এমনকি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ভার্সনে আঁকা শাপলার নমুনা ছবি নির্বাচন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেছে। চিঠিতে তিনি আরও বলেন, এনসিপি পাঠানো দরখাস্তগুলো অনিষ্পন্ন অবস্থায় রেখে নির্বাচন কমিশন বিধি-বহির্ভূতভাবে ‘প্রতীক বাছাইয়ের’ চিঠি পাঠিয়ে এনসিপিকে স্বেচ্ছাচারীভাবে প্রার্থিত প্রতীকের বাইরে গিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে দেবে বলে হুমকি দিচ্ছে, যা অনাকাঙ্খিত, স্বেচ্ছাচারী এবং বেআইনি। এনসিপির পাঠানো চিঠিতে ৪টি দাবি উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো- ক. নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা প্রদান করবে-প্রতীক অন্তর্ভুক্তি বা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের বিদ্যমান নীতিমালা বা মানদ- কী এবং কোন আইনি ভিত্তিতে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ বা ‘লাল শাপলা’ প্রতীককে বর্তমান তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। খ. যদি এমন কোনও মানদ- এখনও প্রণয়ন না করা হয়ে থাকে, তবে নির্বাচন কমিশনকে তা অবিলম্বে প্রণয়ন ও প্রকাশ করতে হবে এবং সব রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ করতে হবে। গ. নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের বিধিমালার ফরম-২ অনুসারে এনসিপির প্রার্থিত প্রতীকের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। ঘ. কমিশন প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত, স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে তার সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করবে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এনসিপি মনে করে প্রতীক ইস্যুতে নির্বাচন কমিশন এনসিপির সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করছে। যার ফলশ্রুতিতে নির্বাচন কমিশন জনগণের সঙ্গে তার স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহির সম্পর্ককে এড়িয়ে গিয়ে নিজের খেয়াল-খুশি মতো এলোমেলোভাবে পরিচালিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ফ্যাসিবাদী আমলের পাতানো নির্বাচন আয়োজনকারী কমিশনের থেকে নিজের কার্যক্রমকে আলাদা করতে পারছে না এবং দেশবাসীকে আবারও একটি সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এনসিপির প্রতি নির্বাচন কমিশনের বৈরি আচরণ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের সদিচ্ছা, সক্ষমতা ও আন্তরিকতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় এনসিপি আশা করে, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার বিধি ৯(১) সংশোধনক্রমে জাতীয় নাগরিক পার্টির অনুকূলে ১. শাপলা ২. সাদা শাপলা এবং ৩. লাল শাপলা থেকে যেকোনও একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে। উল্লেখ্য, এর আগে এনসিপিকে পাঠানো ইসির চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নামীয় দলটি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে, যা প্রাথমিক পর্যালোচনায় বিবেচিত হয়েছে। আবেদনপত্রে প্রতীক হিসেবে পছন্দের ক্রমানুযায়ী শাপলা, কলম ও মোবাইল উল্লেখ করা হয়। যা পরবর্তীতে পরিবর্তন (শাপলা, লাল শাপলা বা সাদা শাপলা) করা হয়। উল্লেখ্য যে, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯(১) মোতাবেক প্রার্থীত প্রতীক ‘শাপলা’ অন্তর্ভুক্ত নেই।