জাতীয় সংবাদ

ইসির প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা কলি’, প্রত্যাখ্যান এনসিপির

কারো চাপে নয়, দাবি সচিবের

প্রবাহ রিপোর্ট : নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নতুন প্রতীকের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ‘শাপলা কলি’। প্রতীকটি যুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। তবে ইসির এ সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘শাপলা কলি’ প্রতীক তালিকায় যুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এমন মন্তব্য করেছেন দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব জহুরুল ইসলাম মুসা। তিনি বলেন, ‘আমাদের ‘শাপলা কলি’ দেওয়া হলে তা আমরা মানি না। আমরা শাপলাই চাই। ‘শাপলা কলি’ প্রতীকের তালিকায় যুক্ত করায় আমরা সন্তুষ্ট নই। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নতুন গেজেটে আমাদের “শাপলা কলি” প্রতীক দিয়েছে। কমিশন এটি কীসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করেছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে শাপলা প্রশ্নে আমরা আপসহীন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে জাতীয় যুবশক্তির আয়োজনে ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচন কোন পথে?’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পাটওয়ারী বলেন, কমিশনকে শাপলা সম্পৃক্ত করে নতুন গেজেট দিতে হবে। আমরা শান্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। অন্যতায় কমিশন কার্যালয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে, তা আদায় করে নেবো। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, কোনো ধরনের আইনি কারণ ছাড়া আমাদের শাপলা কলি দিয়ে গেজেট দিয়েছে ইসি। তারা বুঝিয়েছে আমরা বাচ্চাদের দল। যেমনটি বড় দলগুলো আমাদের মূল্যায়ন করে থাকে। এটি এক ধরনের বৈষম্য। সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশন জমিদারি আচরণ করছে। এটি অগ্রহণযোগ্য। শাপলাই হবে এনসিপির প্রতীক। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ দ্রুত জারি করতে হবে। জুলাই সনদের অবস্থানের কারণে প্রমাণিত হয় আগামীতে এনসিপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবে। উল্লেখ্য, এর আগে কয়েক দফা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে শাপলা প্রতীক পেতে বৈঠক করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এছাড়া দলটির পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছিল- শাপলা না দিলে তারা নিবন্ধন নেবে না। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করা হলো প্রতীক তালিকায়। নতুন প্রতীক যুক্ত করায় এখন সব মিলিয়ে নির্বাচনি প্রতীকের সংখ্যা দাঁড়ানো ১১৯টি।
এদিকে, এনসিপির ‘চাপে’ তফসিলে ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন- ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, ‘শাপলা’ আর ‘শাপলা কলি’-র মধ্যে পার্থক্য আছে। এটা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। কোনো দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রতীক যুক্ত করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, এখন আপনি যেটা বলছেন যে শাপলা কলি রাখা হয়েছে কেন- নতুন যে প্রতীকগুলো ভেতরে আসছে, সেখানে শাপলা কলি রাখা হয়েছে। এটা ইলেকশন কমিশন মনে করেছে যে শাপলা কলিটা রাখা যেতে পারে। এটা কারও দাবির প্রাসঙ্গিক বিষয় নয়। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তফসিলটা সংশোধন করেছি। কিছু কিছু প্রতীক নিয়ে কিছু মন্তব্য আমরা শুনেছি- যেমন কেউ বলেছে, এটা রাখলেন কেন, না রাখলে ভালো হতো, রাখা কি যৌক্তিক হয়েছে কি-না ইত্যাদি। এই বিবেচনায়, আগে যে ১১৫টা প্রতীক ছিল, তার থেকে আমরা ১৬টা প্রতীক বাদ দিয়ে নতুন করে প্রতীক নিয়ে ১১৯টা প্রতীক এবার শিডিউল করেছি। এদিকে গত ২২ জুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করে ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়েছিল এনসিপি। তবে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয় দলটিকে এ প্রতীক না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ইসির পক্ষ থেকে বলা হয় তফসিলে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় ‘শাপলা’ প্রতীক পাবে না এনসিপি। নতুন করে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক কেন যুক্ত করা হলো- এমন আরেক এক প্রশ্নের জবাবে ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, আমি আগেই বলেছি- কিছু কিছু প্রতীক সম্পর্কে বিরূপ মতামত আমাদের কানে এসেছে। কমিশন মনে করেছে, এটা সংশোধন করা দরকার বা করা যেতে পারে। সেই বিবেচনায় এটা করা হয়েছে। যেহেতু বিরূপ কিছু সমালোচনা এসেছিল, সেই জন্য কিছু বাদ দিয়ে কিছু নতুন যোগ করা হয়েছে। কিছু বিয়োজন, কিছু সংযোজন। তিনি বলেন, আজ যেমন করা হয়েছে, ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আবার সংশোধন করবে। এটা কোনো স্থির আইন নয়। তর্ক-বিতর্ক উঠলেই কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, কেউ যদি বলে কমিশন চাপে পড়ে এটা করেছে…. না, কমিশন নিজের বিবেচনায় করেছে। এখানে নতুন করে বিতর্কের কিছু দেখছি না। বরং কমিশন আবার প্রমাণ করল যে কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button