জাতীয় সংবাদ

নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্বেগ, সংঘর্ষ চায় না ইসি

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা সংকট বিরাজ করছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। একইসঙ্গে ভোটারদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। তাই তফসিল ঘোষণার আগেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত বলে জানিয়েছেন নেতারা। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কোনো সংঘর্ষ চায় না। সবাইকে আচরণ বিধি মেনে চলার কথাও বলছে সংস্থাটি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ছয়টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে এসব কথা বলা হয়। সংলাপে ছয়টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। দলগুলো হলো-বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, এলডিপি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও এনপিপি। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আপনারা আচরণ বিধি মেনে চলবেন। কেউ যদি গো ধরে বসে থাকে যে মানবোই না, তাহলে তো একটা সাংঘর্ষিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। আমরা কোনো সংঘর্ষ চাই না। কাউকে মোকাবিলা করতে চাই না। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আচরণ বিধি পরিচালন করে এগিয়ে যেতে চাই। সিইসি বলেন, এখানে আপনাদের একটা মূখ্য ভূমিকা নিতে হবে। রাজনীতিদিরা আইন বানিয়ে দেবেন, আমরা তা মেনে চলবো। এখানে আমাদের করার কিছু নাই। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের জন্য পৃথক ভোটার তালিকা করা হবে। তারা ১৮ নভেম্বর থেকে অ্যাপে (পোস্টাল ভোট বিডি) নিবন্ধন করবেন। তবে দেশের ভেতর থেকে যারা এখন আবেদন করছেন তারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় যুক্ত হতে পারবেন না। কেননা, এটার সময় অক্টোবরে শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে সম্ভবত আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবো না। এতে পাবলিকের টাকা নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোট ব্যবস্থার জন্য আমরা ট্রায়াল ছাড়াই প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার রক্ষার্থে এক্সারসাইজটা হাতে নিয়েছি। আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন এবং আমরা ধরেই নিচ্ছি এর মধ্যে ছোটখাট ত্রুটি বিচ্যুতি থাকবে। কিন্তু থাকলেও আমরা প্রথমবারের মতন এটা করার চেষ্টা করছি এবং এখানে সবার সহযোগিতা লাগবে যাতে করে আমরা শুরুতেই বড় ধরনের হোঁচট না খাই। কিছু ভোটার বাদ পড়ে যাবেন, এটা একটা বাস্তবতা। কারণ, বাংলাদেশে প্রবাসী বাংলাদেশী যারা আছেন তারা অনেকেই হয়তো ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সচেতন ছিলেন না। নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদ আহমেদ বলেন, ভোটার তালিকায় ৬ কোটি পুরুষ আর ৬ কোটি নারী; ফিফটি ফিফটি। সবাই বলেন যে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। আমার কাছে অংশগ্রহণমুলক মানে হলো ফিফটি ফিফটি। মানে নারী-পুরুষ সবাই যেনো সমান সুযোগ পায়। অস্বীকার করার উপায় নেই আমাদের যে সমাজ, সেটা পুরুষ প্রধান সমাজ। এটা মেনে নিতেই হবে। কাজেই আমাদের পুরুষরা যদি নারীদের সহযোগিতা না করি তাহলে কিন্তু তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাই আমার অনুরোধ রইলো আপনারা সেটার দায়িত্ব নেবেন। নারীরা যাতে ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারে। নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো আস্থাহীনতা। এটা অস্বীকার করার জো নেই। এই আস্থাটাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং যাবো। তবে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের পাঁচজনের পক্ষে ভালো নির্বাচন দেওয়া সম্ভব না। তিনি বলেন, এবার কিন্তু আমাদের জন্য একটা সুযোগ, এবারের নির্বাচন যদি আমরা ভালো না করতে পারি, আমরা কিন্তু নদীর মাঝখানে নৌকাটা এমন নড়াচড়া করলে ডুবে যাবে। সুতরাং এই দেশের দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে এই দেশটাতো চালাবেন আপনারা। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) ডক্টর চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বীর বিক্রম বলেন, আমরা মনে করি এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট নিরাপত্তা সংকট বিরাজ করছে। শুধু প্রত্যন্ত অঞ্চলে নয় বাংলাদেশের শহর, বন্দর ও নগরীতে। কোনো কোনো দল তাদের কর্তৃত্ব এবং বর্তমান অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য ডাকাত থেকে শুরু করে তাদের চিহ্নিত সন্ত্রাসী পর্যন্ত ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন সঠিক সময়ে চাই। তবে ভোটারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই তফসিল ঘোষণার পূর্বেই একটা নিরাপত্তা সিকিউরিটি অপারেশন করা উচিত। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী বলেন, অতীতের নির্বাচনে দেখা গেছে, কালো টাকার প্রভাব বিস্তার এবং হুমকি-ধামকির মাধ্যমে ভোটারদেরকে প্রভাবিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যদি এগুলোর প্রতি সুদৃষ্টি রাখা হয় এবং আগে থেকেই এগুলোকে প্রতিহিত করার জন্য এখান থেকে প্রোগ্রাম করা হয় তাহলে আমাদের দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা পেয়ে যাবো। আর যারা দেশের শত্রু তাঁরা যাতে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেজন্য আপনাদের সুদৃষ্টি কামনা করছি। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক দলের একটা শর্ত নির্বাচন অফিসে আছে সেটা হচ্ছে ৩৩ ভাগ নারী সদস্য বাধ্যতামূলক। আমরা আগেও দাবি জানিয়েছি, আজকেও দাবি জানাচ্ছি, এটা বিশেষ করে ইসলামী দলগুলোর জন্য কঠিন হয়ে যায়। ৩৩% নারী সদস্য কমিটিতে রাখার এই বিষয়টি আপনারা বিবেচনায় রাখবেন। বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উপদেষ্টা জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ বাবু বলেন, আমরা সঠিক সময় নির্বাচন চাই এবং নির্বাচনের পরিবেশ যাতে উন্নত হয় সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের যথাসাধ্য চেষ্টা থাকতে হবে। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু বলেন, জামানতের টাকা ৫০ হাজার করা হয়েছে এটা বুর্জোয়া দলগুলোর পক্ষে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু আমাদের মতো দলের পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আগে যে ২০ হাজার টাকা ছিল, আমি দাবি করবো জামানত সেই ২০ হাজার টাকাই যেনো রাখা হয়। বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, বড় দলগুলো নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এখনও বিশাল বিশাল মহড়া চলছে। ইসি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, কোনো কমিশনই বলে না তারা নিরপেক্ষতা হারাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসে তারা আর নিরপেক্ষ থাকে না। এটা আমাদের অতীত ইতিহস। তবে এই কমিশনের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button