জাতীয় সংবাদ

বিভক্তির কারণে সাংবাদিকেরা রাজনীতিকদের পকেটে ঢুকে যান : ফখরুল

প্রবাহ রিপোর্ট : বিভক্তির কারণে সাংবাদিকেরা নিজেরাই রাজনীতিকদের পকেটে ঢুকে যান বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের তো অনেকগুলো ইউনিয়ন আছে। বিএফইউজে, ডিআরইউ, আবার দুই দলের দুই ভাগ আছে, তিন ভাগ। আপনারা নিজেরাই আজকে দলীয় হয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের কাউকে পকেটে নিতে চায়। আপনারা যদি পকেটে ঢুকে যান, তখন কিন্তু সমস্যা।”
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) আয়োজিত মিডিয়া সংস্কার প্রতিবেদনের পর্যালোচনা শীর্ষক এই সেমিনারে গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিশ্রুতি খুবই পরিষ্কার। আমরা ৩১ দফার মাধ্যমে স্পষ্ট করে বলেছি যে আমরা একটি স্বাধীন গণমাধ্যম দেখতে চাই এবং সেটি গড়ে তুলতে চাই। সেজন্যই আমরা তখনই একটি কমিশন গঠনের অঙ্গীকার করেছিলাম।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা আশা করি, আমরা যদি জনগণের ভোটে সরকার গঠনের দায়িত্ব পাই, তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে এ বিষয়টি অগ্রাধিকার দেব।”
তিনি বলেন, “বিএনপি যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে, তখনই গণমাধ্যমকে উন্নত ও উপযোগী করে তোলার জন্য নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের নানা সংস্কারের অন্যতম লক্ষ্য ছিল গণমাধ্যম। প্রায় ৪ মাসের আলোচনা শেষে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের যে সুপারিশ, তা নিয়েও আছে নানা পর্যবেক্ষণ। সম্প্রচার সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সেসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করছে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)।”
মতবিনিময়ের ধারাবাহিকতায় চতুর্থ ধাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করে বিজেসি। মতবিনিময়ে বিগত সময়ে গণমাধ্যমের পক্ষপাতমূলক অবস্থানের সমালোচনা করেন রাজনীতিকেরা।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলেই সংবাদমাধ্যমের উন্নয়ন হয় দাবি করে দলটির মহাসচিব বলেন, “১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। দেশের সমস্ত পত্রিকাগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল মাত্র চারটি পত্রিকা ছাড়া, সে পত্রিকাগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলছিল।”
“এ অবস্থা থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্র পরিচালনায় এসছেন, তখন তিনি একটা মুক্ত স্বাধীন সংবাদপত্রের ব্যবস্থা করেছেন। তখন অনেক সংবাদপত্র বেরিয়ে এসেছে এবং মাধ্যমগুলো চালু হয়েছে। আমরা পরবর্তীকালে দেখেছি, বিএনপি যখনই রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে, তখনই গণমাধ্যমকে উন্নত করবার জন্য অনেকগুলো ব্যবস্থা নিয়েছে। তার মধ্যে আজকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আমরা দেখছি, সেই সময় কিন্তু কাজগুলো শুরু হয়েছিল।”
রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে খেদ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “সংস্কার যদি আমরা হৃদয়ে ধারণ না করি, মনের মধ্যে না নিই; তাহলে এভাবে সংস্কার কতটুকু সম্ভব হবে—আমি জানি না।”
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বারবার, বিশেষ করে ৫ অগাস্টের পর বলে আসছি; আপনারা বিগত ১৫ বছরের মত আর কাউকে বিদেশে চলে যেতে হয়, পালাতে হয়, এমন করে আমাদের (রাজনীতিবিদ) তুলে ধরবেন না, তৈরি করবেন না। সেক্ষেত্রে আমাদের যেমন সীমাবদ্ধতা আছে, দুর্বলতা আছে, ব্যক্তিগতভাবে আমাদের ত্রুটি আছে; সেগুলোকে তুলে ধরে আমাদের শাসন করার দায়িত্ব আপনাদের আছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনে করে, শাসন করার এ দায়ভারটি আপনাদের নিতে হবে অত্যন্ত ন্যায় নিরপেক্ষতার সাথে।”

“একটু আগে আমাদের সামনে যে কথা শুনেছি, আপনারা আমাদের কেউ হবেন না। কিন্তু আমি আপনাদের কাছে একটা আহ্বান রাখতে চাই, আপনারা অবশ্যই বাংলাদেশের হবেন।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “সাংবাদিকদের একটা বড় সংকট হলো তাদের সম্মানী, পারিশ্রমিক ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতা। আমরা সময় সময় এটা দেখেছি; আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ের যে সাংবাদিকরা আছেন, আমরা যদি জেলা ও উপজেলা শহরের সাংবাদিকদের দিকে তাকাই, তাদের সুর্নিদিষ্ট কোনো বেতন কাঠামো নাই।”
“তারা মাস শেষে বেতনটাও পান না। তাদেরকে নির্ভরশীল ও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। এই যে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা, সেটাও স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটা ব্যাঘাত তৈরি করে।”
“যদি জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের কোনো রাজনৈতিক নেতা বা কোনো প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী থেকে তাদের জীবন চালাতে হয়, তাহলে সংবাদ প্রকাশের সময়ও কিন্তু তাদের সেই রাজনৈতিক দল বা নেতা বা সেই যে প্রতিষ্ঠান, তাদের মতো করে সংবাদ পরিবেশনের একটা মনস্তাত্বিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেই জায়গাটাতে একটা পরিবর্তন দরকার।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “আগামী পাঁচ বছরের জন্য কারা দায়িত্ব পাবেন, বোঝা যায় তো নাকি? আমি জানি না। আপনারা হয়তো বলতে চাইবেন না।”

“আমি বলি, আমার তো মনে হয়, আমি কোনো বিএনপির পক্ষে ক্যাম্পেইন করি না, আমি তো বিএনপি করি না। কিন্তু আমার মনে হয়, অনেক ক্রিটিসিজমের পরও শেষ পর্যন্ত মানুষ বিএনপিকেই ভোট দেবে।”
বিজেসির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে আট দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—সম্প্রচারমাধ্যমের জন্য আলাদা আইন প্রণয়ন, একটি স্বাধীন জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠন, টিভি চ্যানেলগুলোকে পে-চ্যানেল ঘোষণা করা ও সম্প্রচারমাধ্যমকে শিল্প ঘোষণা এবং সম্প্রচার সাংবাদিকদের জন্য জবাবদিহিমূলক ‘কোড অব এথিকস’ প্রণয়ন; টিভি লাইসেন্স নীতিমালা ও মালিকানার ধরন নির্ধারণ, পরিচালনা পর্ষদে কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মতো কাঠামোগত সংস্কার, স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কর্তৃপক্ষ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সাংবাদিকতার নীতিমালার প্রণয়ন ইত্যাদি।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজেসির নির্বাহী মিলটন আনোয়ার। বিজেসির ট্রাস্টিদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন তালাত মামুন ও ফাহিম আহমেদ। এ আয়োজনে সহায়তা করে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন।
বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button