হাদির মাথায় গুলি চালায় ফয়সাল, বাইকের চালক আলমগীর : ডিএমপি

সীমান্ত পারাপার চক্রের দুজন গ্রেপ্তার
প্রবাহ রিপোর্ট : ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি চালানো ব্যক্তি এবং তার সহযোগী ও মোটাসাইকেল চালককে শনাক্তের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তার দেয়া তথ্যমতে শনাক্ত দুই জন ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ফয়সাল গুলি চালিয়েছে এবং আলমগীর মোটরসাইকেলের চালকের আসনে ছিলেন।
চিহ্নিত দুজনকে গ্রেফতারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোর কথাও জানান তিনি। বলেন, তাদের দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার কোনো তথ্য নেই। তবে তারা যেন পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য বিজিবি এবং সকল বন্দরকে সতর্ক করা হয়েছে।
ডিএমপির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, হাদির ওপর হামলার ঘটনায় সীমান্ত পারাপার করার কাজে জড়িত এমন দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের থেকে তথ্য নিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া সন্দেহভাজনদের পাসপোর্ট ব্লক করে দেয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কেউ দেশত্যাগ করেছে এমন কোনো তথ্যও আমরা পাইনি।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে যদি আজ বাদী হয়ে মামলা না করা হয়, তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। এছাড়া হাদির ওপর গুলি চালানো ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয় নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি রিকশায় করে যাওয়ার পথে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রসীদের হামলার শিকার হন। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে করে এসে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বর্তমানে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় এরইমধ্যে হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় সীমান্ত পারাপার চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ঢাকায় আনা হচ্ছে। হাদিকে গুলির ঘটনায় এ নিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজনদের পাসপোর্ট ব্লক করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, রাজধানীর পল্টনের বিজয়নগর এলাকায় হেলমেট পরিহিত অবস্থায় সন্দেহভাজনরা খুব কাছ থেকে ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একযোগে অভিযান চলছে। অভিযুক্তরা যাতে সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে, সে জন্য তাদের পাসপোর্ট ব্লক করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে লোক পারাপারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে এবং মোটরসাইকেলের মালিককে র্যাব আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
তিনি আরও জানান, অভিযুক্তদের কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছে কি না—এমন কোনো তথ্য এখনো ইমিগ্রেশন ডাটাবেজে পাওয়া যায়নি। ফয়সাল করিম মাসুদের সর্বশেষ বিদেশ যাত্রার তথ্য অনুযায়ী, তিনি জুলাই মাসে থাইল্যান্ড থেকে দেশে প্রবেশ করেন। এরপর তার দেশত্যাগের কোনো রেকর্ড নেই।
হাদির ওপর হামলার পেছনের কারণ সম্পর্কে এ কর্মকর্তারা বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের একজন শীর্ষ সংগঠক হিসেবে হাদি ছিলেন একটি পক্ষের প্রতিপক্ষ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের পক্ষ থেকেই তাকে টার্গেট করে পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার তিন দিনেও মামলা না হওয়ার বিষয় জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা না হলেও আমরা জিডি করেছি। এখন বাদীপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। যদিও তারা রোগী নিয়ে ব্যস্ত, আমরা চেষ্টা করছি মামলার ড্রাফট নিয়ে বাদীর স্বাক্ষর আনার। এটা সম্ভব না হলে প্রয়োজনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে।
নির্বাচন সামনে রেখে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট-২ : নির্বাচনকালীন সহিংসতা ও নাশকতা ঠেকাতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট–টু’ শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই অভিযান শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশে জোরদার করা হচ্ছে। যারা দুষ্কৃতকারী, অস্ত্রধারী কিংবা নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে—তাদের আইনের আওতায় আনাই এই অভিযানের মূল লক্ষ্য।
জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল বলেন, হাদি একজন নন, দেশে হাজারো, লাখো জুলাইযোদ্ধা রয়েছেন। প্রত্যেকের জন্য আলাদা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে রাষ্ট্র ও রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি যেসব সম্মুখসারির জুলাইযোদ্ধা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের বিষয়ে আলাদা করে থ্রেট অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী হাই-প্রোফাইল ও ঝুঁকিপূর্ণ জুলাই যোদ্ধার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পুলিশ জানায়, কোনো এলাকায় সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী বা অপরাধীর তথ্য পেলে তা দ্রুত পুলিশ বা ৯৯৯-এ জানানোর জন্য। তথ্যদাতার পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে।



