জাতীয় সংবাদ

নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ দেশকে সংকটের মুখে ফেলতে পারে: হাসনাত কাইয়ুম

প্রবাহ রিপোর্ট : ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণে নির্বাচন যদি প্রশ্নের মুখে পড়ে, তাহলে বাংলাদেশ তার সংকট থেকে বের হতে পারবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ছাত্ররা মূলত বলল হাসিনার মতো আর কেউ যেন স্বৈরতান্ত্রিক না হয়ে উঠে, আর যেন কেউ ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে, তার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা ব্যবস্থার ফর্মুলা হিসেবে বললাম, এই সংস্কারের জন্য জনগণের কাছ থেকে ম্যান্ডেট নিতে হবে এবং গণভোটের মাধ্যমে আগাম মতামত গ্রহণ করতে হবে। সে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই কিন্তু আগামী নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে।’ হাসনাত কাইয়ুম বলেন, নির্বাচন সংস্কারের একটি কমিশন তৈরি করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন একটি সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিল, সেটা হচ্ছে দল নিবন্ধনের আইন। ১/১১ সরকার একটি নিয়ম করেছিল, যে কেউ দল করতে পারবে না। দল করতে হলে তার ৫০টা উপজেলা কমিটি লাগবে, ৭টা জেলা কমিটি লাগবে। এই আইনটা ১৪ সালের নির্বাচনের আগে আরও কঠোর করা হলো। তখন বলা হলো যে, ১০০ উপজেলায় কমিটি লাগবে, সেই কমিটির ২০০ মানুষের আইডি কার্ড লাগবে এবং একটা কার্যকর অফিস লাগবে। মোদ্দা কথা দল করার জন্য একটি বড় ইনভেস্টমেন্ট করার সক্ষমতা থাকতে হবে। এই আইনের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছিলাম। এবারের নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক কমিশন এই আইনটি বলবৎ রাখলো। ফলে এই আইনের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করলাম। মামলায় আমরা বললাম, যদি এই ধরনের আইন বলবৎ রাখা হয় তাহলে পাহাড়ে জনগোষ্ঠীরা তো কখনোই দল গঠন করতে পারবে না। কারণ পাহাড়িরা ২০টি উপজেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ। হয় আঞ্চলিক দল করার অনুমতি দিতে হবে, আর না হয় জাতীয় পর্যায়ে তিনটি জেলা ও ২০টি উপজেলা পর্যায়ে কমিটি দিয়ে দল গঠন করতে পারবে। মূলত এই ধরনের আইনের মাধ্যমে কিন্তু পাহাড়িদের রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করার একটি চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই মামলার রুল ও শুনানি হলো। আদালত টেকনিক্যাল একটি ভুল ধরে মামলাটি খর্ব করে দিল। এর পরবর্তীতে আমরা নিবন্ধন বিষয়ে একটি চ্যালেঞ্জ মামলা করলাম, কারণ হাসিনা আমাদের দলকে নিবন্ধন দেয় নাই। যাবতীয় কাগজপত্র আমরা জমা দিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন জানানো আমাদের নাকি গঠনতন্ত্রে একটি সমস্যা আছে, সেটাও সংশোধন করতে হবে। পরে বললাম ঠিক আছে, আমাদের সময় দিন। কিন্তু সময় আর দেওয়া হয়নি। পরে নির্বাচন কমিশন আমাদের কানে কানে বলল, আদালতে যান। আমাদের আর হাসিনার আদালতে যাওয়ার সাহস হয়নি। ‘অভ্যুত্থানের পর আমরা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বললাম, হাসিনার নিবন্ধন বিষয়ে যে আইন, সেটা একটু রিভিউ করা হোক। তারা বলল, আমাদের তো রিভিউ করার ক্ষমতা নেই। সংস্কার কমিশন কিছু করার আগে আমার আর হাত দেব না। পরে আমরা যখন আদালতে গেলাম, আদালত আমাদের নিবন্ধন দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আদেশ দিল। নির্বাচন কমিশনে এই আদেশ গ্রহণ করে মাসের পর মাস বসে থাকলো। এরপরে আমরা নিজেরাই গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নিয়ে গেলাম। তখন তারা বলল, আপনাদের পুনরায় দরখাস্ত করতে হবে। পরে বললাম আপনারা আদালতের আদেশটি অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে পাঠান। ওখান থেকে যা বলা হবে, আমরা সেটাই মেনে নেব। যদিও নির্বাচন কমিশন তা পাঠায়নি। হাসনাত কাইয়ুম বলেন, আসলে হাসিনার আমলের আইন এখনো পুরোপুরিভাবে বহাল আছে। এইরকম একটি নির্বাচন কমিশন আগামীতে যে নির্বাচন করবে, তাদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণে নির্বাচন যদি প্রশ্নের মুখে পড়ে, বাংলাদেশ যে সংকটের মধ্যে রয়েছে তা থেকে বের হতে পারবে না। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button