‘গুম, হত্যা’: জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ

প্রবাহ রিপোর্ট : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুম ও হত্যাকা-ের অভিযোগে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। প্রসিকিউটর শাইখ মাহদী গতকাল বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কাছে এ অভিযোগ দাখিল করেন। প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানান, ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই অভিযোগপত্র উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান সবশেষ টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে রদবদলের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৬ অগাস্ট তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে ১৬ অগাস্ট তাকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ। প্রথমে তাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হকার শাহজাহানকে হত্যার অভিযোগে ঢাকার নিউ মার্কেট থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতবছর ১২ নভেম্বর তাকে জুলাই-অগাস্টের হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়। ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সেদিন বলেছিলেন, “বরখাস্তকৃত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। অসংখ্য হত্যাকা- ও গুমের সাথে তার সম্পৃক্ততা। আমাদের তদন্ত সংস্থা ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছে।” ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়া জিয়াউল সেনাবাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত কমান্ডো ও প্যারাট্রুপার ছিলেন। ২০০৯ সালে মেজর থাকাকালে তিনি র্যাব-২ এর উপঅধিনায়ক হন। ওই বছরই তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন এবং র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার পরিচালকের দায়িত্ব পান। র্যাবে দায়িত্ব পালনের সময় থেকেই জিয়াউল আহসান হয়ে উঠেছিলেন সংবাদমাধ্যমে পরিচিত নাম। কর্নেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক করে তাকে র্যাবেই রেখে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে জিয়াউল আহসানকে পাঠানো হয় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) পরিচালকের দায়িত্বে। পরের বছরই এনটিএমসির পরিচালক করা হয় জিয়াউল আহসানকে। ২০২২ সালে সংস্থাটিতে মহাপরিচালক পদ সৃষ্টির পর তাকেই সংস্থাটির নেতৃত্বে রাখা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে গুম, খুন এবং ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া গোপন বন্দিশালায় নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রায় ৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জন এবং ৩৪২ কোটি টাকার ‘অস্বাভাবিক লেনদেনের’ অভিযোগে জিয়াউল আহসান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছেদুদক। দুদকের আবেদনে ঢাকার জজ আদালত জিয়াউল আহসানের তিনটি ফ্ল্যাট, পাঁচটি বাড়ি ও প্রায় ১০০ বিঘা জমি জব্দ এবং তার নয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করারও আদেশ দিয়েছে।



