খেলাধুলা

অবশেষে দেশের মাঠে আয়ারল্যান্ডের টেস্ট

স্পোর্টস ডেস্ক : ২০১৮ সালে ডাবলিনের ম্যালাহাইডে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের জগতে পদচারণা শুরু করে আয়ারল্যান্ড। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, সেই অভিষেক ম্যাচটিই এখনও পর্যন্ত দেশের মাঠে আয়ারল্যান্ডের একমাত্র টেস্ট! অবশেষে আইরিশ ক্রিকেটারদের দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষ হতে চলেছে। ৬ বছরের বেশি সময় পর স্বাগতিক হিসেবে একটি টেস্ট খেলতে যাচ্ছে আয়ারল্যান্ড। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার। আইরিশ ক্রিকেটের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হওয়ার ম্যাচ দিয়ে একটি মাইলফলকের সূচনাও হতে যাচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটের জগতে যুক্ত হচ্ছে নতুন এক ভেন্যু-বেলফাস্টের স্টরমন্ট। স্টরমন্টের এই সিভিল সার্ভিস ক্রিকেট ক্লাব মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়ে আসছে ২০০৬ সাল থেকেই। এখনও পর্যন্ত ৩৪টি ওয়ানডে ও ২৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে এখানে। ৭৫ বছর পুরোনো এই মাঠ হতে যাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের ১২৩তম ভেন্যু। আর ২৩তম ক্রিকেট জাঁতি হিসেবে টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করতে যাচ্ছে নর্দান আয়ারল্যান্ড। এখানে অবশ্য একটু খটমটে লাগতে পারে অনেকের। ব্যাপারটি হলো, রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড ও নর্দান আয়ারল্যান্ড এমনিতে আলাদা দুটি দেশ। তবে খেলাধুলার ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন খেলায় ভিন্নরকম। ক্রিকেট ও রাগবি ইউনিয়নে একসঙ্গেই আয়ারল্যান্ড নামে খেলে থাকে দুই দেশ। ফুটবলসহ বেশ কিছু খেলায় আবার দুই দেশ খেলে আলাদা হয়েই নিজেদের নামে। অলিম্পিকসে নর্দান আইরিশ কিছু অ্যাথলেট অংশ নেন গ্রেট বৃটেনের হয়ে, কিছু অ্যাথলেট খেলেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে। নর্দান আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেট সংস্কৃতি অনেক পুরোনো। আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারদের কয়েকজন এখান থেকেই উঠে এসেছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দুটি নাম অবশ্যই সাবেক অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড ও এখনকার সীমিত ওভারের দলের অধিনায়ক পল স্টার্লিং। এছাড়াও বয়েড র‌্যানকিন, গ্যারি উইলসনরা এসেছেন নর্দান আয়ারল্যান্ড থেকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই টেস্টের ১৪ জনের স্কোয়াডের ৬ জন আছেন নর্দান আইরিশ- স্টার্লিং, মার্ক অ্যাডায়ার, ম্যাথু হামফ্রেজ, অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন, জেমস ম্যাককলাম ও ক্রেইগ ইয়াং। এমনিতে দুই দেশের জাতীয়তা, রাজনীতি ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে আইরিশ ক্রিকেটারদের মধ্যে আলোচনা কম হয় বলেই জানালেন দলের পেস আক্রমণের নেতা মার্ক অ্যাডায়ার। তবে জন্মভূমিতে টেস্ট ম্যাচ খেলার রোমাঞ্চ তাকে স্পর্শ করছে প্রবলভাবেই। “দারুণ গর্বিত এক নর্দান আইরিশ হব আমি এ দিন। রাগবির মতো এখানেও এই ব্যাপারটিকে দারুণ সম্মানের চোখে দেখা হয়। যদিও এটা নিয়ে আলোচনা খুব একটা হয় না। খুব বেশি আলোচনার আসলে প্রয়োজনও নেই, এটাই ভালো। তবে আমার জন্য এটা দারুণ গর্বের।” “অবশ্যই ব্যাপারটি একটু ‘ট্রিকি।’ ছোট্ট এই দ্বীপটি পড়েছে যুক্তরাজ্যে, বাকি অংশটুকু নয়। বেলফাস্ট থেকে ঘণ্টাখানেক ড্রাইভ করলেই গাড়ির গতিসীমার ব্যাপারটি মাপা হবে কিলোমিটারে, মাইলের হিসেবে নয়। পাউন্ডের বদলে লেনদেন হবে ইউরোতে। আমরা সবাই এসব জানি। তবে এসব আমাদের ভাবনায় আসে না।” বেলফাস্টের অদূরে ছোট্ট শহর হলিউডে জন্ম ও বেড়ে ওঠা অ্যাডায়ারের। স্টরমন্টের এই মাঠ থেকে মিনিট দশেকের ড্রাইভ তার বাড়ি। ম্যাচের আগে তিনি হেসে বলছিলেন, “আমার বাড়ির চেয়ে টিম হোটেলই বরং বেশি দূরে।” সেই আপন আঙিনাতেই এবার লাল বল হাতে ছুটবেন অ্যাডায়ার। ২৮ বছর বয়সী পেসারের কাছে এটা কল্পনার চেয়েও বেশি কিছু। “আমার জন্য এটা সত্যিই স্পেশাল। বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে কখনও ভাবতেও পারিনি এমন কিছু করতে পারব বা করার সুযোগ যাবৃ এটির তাৎপর্য আসলে পুরোপুরি বোঝাতে পারব না আমিৃ।” ২০১৭ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়া আয়ারল্যান্ডের মাত্র নবম টেস্ট এটি। ২০১৮ সালে অভিষেক টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার পর ২০১৯ সালে তারা টেস্ট খেলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেরাদুনে। এরপর চার বছরের বিরতি। গত ১৫ মাসে অবশ্য পাঁচটি টেস্ট খেলতে পেরেছে তারা। তবে সবকটিই বিদেশের মাঠে- বাংলাদেশের বিপক্ষে মিরপুরে, শ্রীলঙ্কায় গলে দুটি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে এবং গত ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আবু ধাবিতে। মূলত আর্থিক সঙ্কটেই দেশের মাঠে নিয়মিত টেস্ট আয়োজন করতে পারছে না ক্রিকেট আয়ারল্যান্ড। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে এই টেস্টের পর আবার কবে হবে আরেকটি টেস্ট, জানে না কেউই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button