উচ্চ দাম সত্বেও ২৪ ঘণ্টায় ৫০ লাখ টিকিটের আবেদন

স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ^কাপ টিকিটের উচ্চ মূল্য নিয়ে সমর্থকদের ক্ষোভ তুঙ্গে। এর মাঝেই ফিফা শুক্রবার জানিয়েছে, ২০২৬ বিশ^কাপের টিকিট বিক্রির তৃতীয় ধাপের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় তারা ৫০ লাখ টিকিটের আবেদন পেয়েছে। টিকিটের উচ্চমূল্য নিয়ে সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর তীব্র সমালোচনার কারণে টিকিট কেনার উৎসাহে ভাটার আশঙ্কা সত্বেও এই পরিসংখ্যানকে সংস্থাটি বৈশি^ক চাহিদার ‘অসাধারণ’ প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছে। এই সপ্তাহের শুরুতে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের সমর্থকেরা আবেদন জমা দেন। গত সপ্তাহে টুর্নামেন্টের ড্র হওয়ার পর নির্দিষ্ট ম্যাচের টিকিটের জন্য আবেদন করার এটি ছিল সমর্থকদের প্রথম সুযোগ। উল্লেখ্য, ২০২৬ বিশ^কাপ অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে।
ইতিহাসে প্রথম ৪৮ দল নিয়ে বিশ^কাপ আয়োজনের প্রাক্বালে ফিফা এই সংখ্যাকে টুর্নামেন্টের গতি ও জনপ্রিয়তার প্রমাণ হিসেবে দেখাচ্ছে। একই সঙ্গে, বৃহস্পতিবার টিকিটের দাম প্রকাশের পর যে সমালোচনা শুরু হয়েছে, তার পরও মূল্য কাঠামো পুনর্বিবেচনার তেমন কোনো ইঙ্গিত সংস্থাটি দিচ্ছে না।
ইউরোপজুড়ে সমর্থক সংগঠনগুলো ফিফার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে তারা সাধারণ ভক্তদের প্রতিযোগিতার বাইরে ঠেলে দিচ্ছে। ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপ (এফএসই) বর্তমান মূল্য কাঠামোকে ‘চাঁদাবাজিমূলক’ আখ্যা দিয়ে, দাম পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত জাতীয় অ্যাসোসিয়েশনগুলোর মাধ্যমে টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে এফএসই বলেছে, ‘এটি বিশ^কাপের ঐতিহ্যের সঙ্গে এক ভয়াবহ বিশ^াসঘাতকতা। এই প্রতিযোগিতাকে যে সমর্থকেরা প্রাণ দেয়, তাদের অবদানকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে।’
জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, গ্রুপ পর্বের খেলা দেখতে সর্বনি¤œ ১৮০ (২২ হাজার টাকা) থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ ডলার (৮৫,৫৬৭ টাকা) খরচ করতে হবে। আর ফাইনালের টিকিটের দাম ৪,১৮৫ (৫ লাখ ১১ হাজার ৫৬৬টাকা) থেকে ৮,৬৮০ ডলার (১০ লাখ ৬১ হাজার টাকা) পর্যন্ত।
ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাদের ‘ইংল্যান্ড সাপোর্টার্স ট্রাভেল ক্লাব’ সদস্যদের জানিয়েছে, ফাইনাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের প্রতিটি ম্যাচ দেখতে চাইলে শুধু টিকিটেই খরচ পড়বে ৭,০০০ ডলারেরও বেশি। সমালোচকদের মধ্যে সবচেয়ে সোচ্চার স্কটল্যান্ডের সমর্থক গোষ্ঠীগুলো। ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবার স্কটল্যান্ড বিশ^কাপে যোগ্যতা অর্জন করেছে স্কটল্যান্ড।
অ্যাসোসিয়েশন অব টার্টান আর্মি ক্লাবস (এটিএসি) বলেছে, ‘এর ফলে আমাদের বহু সমর্থক বাদ পড়ে যাবে। বিশ^কাপ দেখার স্বপ্নে বিভোর আমাদের তরুণ ভক্তদের স্বপ্ন ফিফা কার্যত মেরে ফেলেছে।’
স্কটিশ এফএ’কে সরাসরি ফিফার কাছে এই উদ্বেগ তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডের এফএ-ও আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থকদের অসন্তোষ জানাতে পারে, যদিও মূল্য কাঠামো বদলানোর বিষয়ে আশাবাদ খুব কম।
ফিফা জানিয়েছে, প্রথম ২৪ ঘণ্টায় টিকিটের চাহিদায় শীর্ষে তিনটি স্বাগতিক দেশের সমর্থকরা। এরপর বড় আগ্রহ দেখিয়েছে কলম্বিয়া, ইংল্যান্ড, ইকুয়েডর, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্কটল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও পানামার সমর্থকরা।
গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকিটের আবেদন পড়েছে ২৭ জুন মিয়ামিতে হতে যাওয়া কলম্বিয়া বনাম পর্তুগাল ম্যাচটির (যেখানে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো খেলতে পারেন) জন্য। এছাড়াও চাহিদার শীর্ষে রয়েছে-ব্রাজিল বনাম মরক্কো (নিউ জার্সি), মেক্সিকো বনাম দক্ষিণ কোরিয়া (গুয়াদালাহারা), ইকুয়েডর বনাম জার্মানি (নিউ জার্সি) এবং স্কটল্যান্ড বনাম ব্রাজিল (মিয়ামি) ম্যাচের টিকিট ।
দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার দর্শকদের প্রবল আগ্রহের কথা জানিয়েছে ফিফা। ফিফার মতে এটি ২০২৬ সালের জুনে কিক-অফের আগে গোটা অঞ্চলের কল্পনাকে ‘আবিষ্ট’ করার ক্ষমতার প্রমাণ।
উল্লেখযোগ্যভাবে, সাত বছর আগে বিডিং প্রক্রিয়ার সময় ইউএস সকার কর্মকর্তারা ২১ ডলারের অসংখ্য টিকিটের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু এবার ফিফা পুরুষদের বিশ^কাপে প্রথমবারের মতো ডায়নামিক প্রাইসিং চালু করেছে-যা এ গ্রীষ্মের ক্লাব বিশ^কাপে ব্যবহৃত মডেলের অনুরূপ।
তুলনামূলকভাবে, ১৯৯৪ বিশ^কাপে (যুক্তরাষ্ট্র অনুষ্ঠিত) টিকিটের দাম ছিল ২৫ থেকে ৪৭৫ ডলার, আর কাতার ২০২২ বিশ^কাপে দাম ঘোষণা করা হয়েছিল আনুমানিক ৭০ থেকে ১,৬০০ ডলার।
বর্তমান বিক্রয় ধাপে ‘র্যান্ডম ড্র পদ্ধতি’ ব্যবহার করা হচ্ছে। সমর্থকেরা ম্যাচ, ক্যাটাগরি ও টিকিটের সংখ্যা অনুযায়ী আবেদন করতে পারেন, তবে আবেদন করলেই টিকিট নিশ্চিত নয়।
এই তৃতীয় ধাপ চলবে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। সফল আবেদনকারীদের ফেব্রুয়ারিতে জানানো হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্য কেটে নেওয়া হবে।
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বারবার চাহিদার পরিসংখ্যানকে বর্তমান ব্যবস্থার বৈধতা হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাদের দাবি, বিশ^কাপ এখনো বিশ^জুড়ে ফুটবলে বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ফিফা জানিয়েছে, ‘একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে ফিফা, ফিফা বিশ^কাপ থেকে অর্জিত আয় ফুটবলের বিকাশে পুনর্বিনিয়োগ করে।’ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ২০২৩-২৬ সময়কালের বাজেটভুক্ত বিনিয়োগের ৯০ শতাংশেরও বেশি তাদের ২১১টি সদস্য অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে পুনর্বিনিয়োগ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া ১৫ ডিসেম্বর থেকে ফিফার রিসেল মার্কেটপ্লেসে টিকিট পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে অফিসিয়াল পার্টনারদের মাধ্যমে হসপিটালিটি প্যাকেজ ও অল-ইনক্লুসিভ ভ্রমণ প্যাকেজও বিক্রির জন্য থাকবে।
তবে এসব বিকল্প ঐতিহ্যবাহী সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর উদ্বেগ কতটা কমাতে পারবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়-কারণ চাহিদা বাড়ছেই, আর দাম নিয়েও নজরদারি ও সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে।



