মেসির সাথে কি হয়েছিলো সেইদিন কলকাতায়?

স্পোর্টস ডেস্ক : দুই যুগ পর ভারতে পা রাখলেন লিওনেল মেসি। জিওএটি ট্যুের এসে শুরুতেই বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েন আর্জেন্টিনা ফরোয়ার্ড। কলকাতায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আয়োজক কমিটির অব্যবস্থাপনায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারিতে চরম হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। মেসিকে দেখতে না পেয়ে ভাঙচুর চালান ক্ষুব্ধ সমর্থকরা। পরে আয়োজক প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিশৃঙ্খলার জন্য মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ক্ষমা চান। আর এমন ঘটনা বিশে^র বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। মেসিকে দেখতে না-পাওয়ার ক্রোধে উন্মত্ত জনতার তা-বে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছে কলকাতা। ওই দিনের বিশৃঙ্খলার সব ঘটনার কথা ক্রমশ বাইরে আসছে। অবস্থা এতটাই বেগতিক ছিল যে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করতে শুরু করেছিলেন মেসি, সুয়ারেজ, ডি’পলরা। চূড়ান্ত গোলমাল শুরু হওয়ার আগেই দ্রুত মাঠ ছেড়েছিলেন লিওনেল মেসি। কেন দর্শকদের দেখা না দিয়েই মাঠ ছেড়েছিলেন? কেন সময়ের আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি? মাঠে উপস্থিত বিভিন্ন ভাষ্যের বরাতে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ যুবভারতীর চার এবং পাঁচ নম্বর গ্যালারির মাঝখানের পথ দিয়ে মেসির গাড়ি এসে থামে যুবভারতীর অ্যাথলেটিক ট্র্যাকের সামনে। মেসি গাড়ি থেকে নামতেই তাকে ঘিরে ফেলেন শ’খানেক মানুষ-মূলত উদ্যোক্তা, ফটোশিকারি, নেতা, মন্ত্রী এবং তাদের নিকটজনরা। মেসির গায়ে কার্যত লেপ্টে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ^াস। প্রভাবশালীদের ভিড় মেসির সঙ্গে সঙ্গে এগোয়, যথেচ্ছা ছবি তোলার চেষ্টায় শুরু হয়ে যায় ধাক্কাধাক্কি। একে অন্যকে সরানোর চেষ্টা বা ধাক্কাই শুধু নয়, মরিয়া সেলফি শিকারিদের একজনের কনুইয়ে গুঁতো লাগে লুইস সুয়ারেজের পেটে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে এমনটাই জানা গেছে। এখানেই শেষ নয়, কোনও একজনের নখের আছড়ও লাগে রদ্রিগো ডি’পলের হাতে। মুখে হাসি বজায় রাখার চেষ্টা করলেও, অস্বস্তি অনুভব করতে থাকেন মেসি। পরিস্থিতি বেগতিক, বুঝে গিয়েছিলেন মেসির নিরাপত্তারক্ষীরাও। তারা আর ঝুঁকি নেননি। দ্রুত মেসিদের সরিয়ে নিয়ে যান মাঠ থেকে। ওইদিন মাঠে থাকা ভারতের ফুটবলারদের কারও কারও নজরে পড়েছে মেসির অস্বস্তিকর অবস্থা। রহিম নবি বললেন, ‘অনেকেই মেসি, সুয়ারেজ, ডি’পলদের ঘাড়ের কাছে চলে যাচ্ছিলেন। কয়েক মিনিট দেখে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান মেসি। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল, ভিড়ের মধ্যে অস্বস্তি হচ্ছে তার। বিরক্ত হচ্ছিলেন লোকজনের আচরণে। যা চাইছিলেন, করতে পারছিলেন না।’ দীপেন্দু বিশ^াসের বক্তব্য, ‘পেনাল্টি মারার কথা ছিল মেসির। সে জন্য গোল পোস্টের দিকে আসছিলেনও। আমরাও কয়েক জন পোস্টের কাছে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎই মেসিকে আবার ভিড়ের মধ্যে নিয়ে চলে যাওয়া হলো।’ সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, মেসিকে ‘ঠিকমতো হাঁটতেও দেওয়া হচ্ছিল না। কোনও দিক দিয়েই ভিড় থেকে বেরোতে পারছিলেন না। গ্যালারির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাও পারছিলেন না।’’ কেন এমন হয়, খোঁজ করতেই বেরিয়ে আসে অব্যবস্থার ভূরি ভূরি নমুনা। ন্যূনতম পরিকল্পনা তো ছিলই না, দায়িত্বশীল বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে কোনও সমন্বয়ও ছিল না। যা ছিল তা হল অনিয়ম আর স্বজনপোষণ। কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, দুই মন্ত্রীর মেসিকে দখলে নেওয়ার প্রতিযোগিতা থেকে গোলমালের সূত্রপাত। এই দুজন হলেন পশ্চিমবঙ্গের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ^াস। ভারতের আরেকটি সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ভিআইপি সংস্কৃতি। মেসি মাঠে আসতেই কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি ও আলোকচিত্রী তাকে ঘিরে ধরেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেরই চলতে অসুবিধা হয়েছে তার, তারপর গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের দিকে মনোযোগ দেওয়া ছিল খুবই কঠিন। এনডিটিভি লিখেছে, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসির চারপাশে ঘিরে ছিলেন একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ। যে কারণে গ্যালারিতে থাকা দর্শকেরা তার দর্শন পাননি।


