সম্পাদকীয়

পাহাড়ধস রোধে টেকসই উদ্যোগ জরুরি

আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য পাহাড়। আর এ পাহাড় ধসে প্রতিবছর প্রাণ হাড়াচ্ছে বহু মানুষ। এর পরেও পাহাড় কাটা যেমন বন্ধ হয়নি, তেমনি বন্ধ হয়নি পাহাড় দখল বা এর পাদদেশে বসবাস। একদিকে উজাড় হচ্ছে পাহাড়, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে জীবনের ক্ষয়। এছাড়াও পাহাড় ধসে প্রায় সময় সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সারাদেশের সঙ্গে সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অথচ ধস রোধ ও দখলদার উচ্ছেদে টেকসই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কখনো। ফলে প্রতিবছর পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটলেও পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন থেমে নেই। তাই পাহাড়ধস রোধে টেকসই উদ্যোগ জরুরি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দেয়। এবছরও এরইমধ্যে খাগড়াছড়ির আলুটিলায় সাপমারা এলাকায় পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে করে সড়কের উভয় পাশে বহু বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন আটকা পড়েছে। এবং সারাদেশের সঙ্গে সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে একটি লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, পাহাড় ধসে প্রাণহানি-ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রশাসনের কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও পাহাড় ধস ঠেকানোর ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। শুধু প্রাকৃতিক কারণেই পাহাড় ধসে পড়ছে তা কিন্তু নয়। নিয়ন্ত্রণহীন পাহাড় কাটা, পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণসহ আরো কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার পরিণামে ধসে পড়ছে পাহাড়। বর্ষায় প্রাণহানি ছাড়াও পরিবেশ-প্রকৃতিতে এর ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রভাব নিয়ে কারো কোনো চিন্তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। পাহাড় কেটে চলছে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির রমরমা বাণিজ্য। দীর্ঘকাল ধরে পাহাড় কাটা, স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা গাছপালা উজাড়ের ফলে পাহাড়ের অবশিষ্ট মাটি আলগা হয়ে যায়। যার ফলে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের গা বেয়ে তীব্র বেগে নেমে আসা ঢল আলগা মাটি ধুয়ে নিয়ে নিচে নামতে থাকে। পাহাড় হয়ে পড়ে দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ। ঘটে পাহাড় ধস। মারা যায় পাহাড়ের ঢালে বস্তিতে বাস করা নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষ। তাই শুধু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালের বসতি উচ্ছেদের ব্যবস্থা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, পাহাড় ধস ঠেকানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের বৃক্ষ উজাড়, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ। সর্বোপরি, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনে সরকারের শীর্ষ মহলকেই এগিয়ে আসতে হবে। নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। কমে আসবে পাহাড় ধস। পর্যটকেরা আমাদের দেশে এসে পাহাড় দেখে মুগ্ধ হবে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বব্যাপী। আর কোন পাহাড় যেন মৃত্যু উপত্যকা না হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button