জাতীয় সংবাদ

জাতিসংঘে গণঅভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রবাহ রিপোর্ট : পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন। গতকাল শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মলেনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যোগদান উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, প্রধান উপদেষ্টা আগামীকাল ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। তিনি আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর অধিবেশন শেষে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বক্তব্য রাখবেন। বক্তব্যে তিনি বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে উঠে আসতে পারে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, প্রধান উপদেষ্টার পরিচিতি এবং সুনাম বিশ্বব্যাপী। এ কারণে অনেকগুলো বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও সভায় অংশগ্রহণ করার জন্যও অনুরোধ এসেছে। যেহেতু তিনি মাত্র তিনদিন নিউইয়র্কে অবস্থান করবেন, সেহেতু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই স্বল্প সময়েরর মধ্যে সকলের অনুরোধ রক্ষা করা বেশ কঠিন। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ অধিবেশনে আমরা রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের সাইড ইভেন্টও আয়োজন করছি। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কাজ শুরু করেছে। এ প্রেক্ষাপটে এবারের অধিবেশন নতুন বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘে বা বিশ্ব সভায় নতুন পদচারণা। এবারের অধিবেশনে আমাদের কাছে একটি বিরাট সুযোগ বিশ্বদরবারে এই বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশকে উপস্থাপনের জন্য। তৌহিদ হোসেন জানান, জাতিসংঘের অগ্রাধিকার ইস্যুগুলো প্রত্যেকটি বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ইস্যুগুলোর ওপর যেসব ইভেন্ট আছে, বাংলাদেশ তার সব কয়টিতেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ বহুপাক্ষিক কূটনীতিকে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে মনে করে। সার্বিক বিবেচনায় এবারের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত ও সুদৃঢ় করবে আশা করা যাচ্ছে।
সফরসঙ্গী হচ্ছেন ৫৭ জন: পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হচ্ছেন ৫৭ জন। তবে এই সংখ্যা বিগত আমলের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম। উপদেষ্টা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবার বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সদস্যের প্রতিনিধিদল গ্রপ্তাইয়র্ক সফরে যাচ্ছে না, যার যে সংশ্লিষ্টতা বা দায়িত্ব সে অনুযায়ী যতটা সম্ভব সীমিত আকারে প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা জানান, এবারের প্রতিনিধিদলে সব মিলিয়ে ৫৭ জন সদস্য যাচ্ছেন। এখন অপ্রয়োজনীয় কোনো খরচ করা যাবে না। স্বাভাবিক সময়ে ৭৩তম এবং ৭৪তম অধিবেশনে ৩৪৪ জন ও ৩৩৫ জন ছিল সংখ্যা। এরপর করোনার জন্য ৭৫তম অধিবেশন হয়েছে ভার্চ্যুয়ালি। কোভিডের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ৭৬তম অধিবেশনে ১০৮ জন, ৭৭তম অধিবেশনে ১৩৮ জন এবং কোভিড পরবর্তী যখন ব্যয় সংকোচন বলা হচ্ছিল তখনও ৭৮তম অধিবেশনে ১৪৬ জন গেছেন।
মোদীর সঙ্গে দেখা হচ্ছে না: জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক হচ্ছে না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী; ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘের মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএআইডি প্রশাসকের সঙ্গে দেখা হওয়াটা কনফার্ম হয়েছে। আর কিছু পাইপলাইনে আছে। সেগুলো শেষ মুহূর্তে জানতে পারবো বলে আশা করছি। মোদীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওঁদের দুজনের উপস্থিতি নিউইয়র্কে একসঙ্গে হচ্ছে না। কারণ মোদী একটু আগে চলে যাচ্ছেন, আর আমাদের প্রধান উপদেষ্টা একটু দেরিতে যাচ্ছেন। কাজেই সেখানে তাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে।
পাহাড়ে অন্য কোনো দেশের ইন্ধন আছে কিনা জানি না: পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, পাহাড়ে তৃতীয় কোনো পক্ষের ইন্ধন আছে কিনা জানি না। আমরা এটা অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবেই দেখছি। সেই অনুযায়ী সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এটি নিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের ভাষ্য পাচ্ছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কেউ এমন লিখছেন যে ৫ আগস্টের পরে সেভেন সিস্টার্স অশান্ত করার এক ধরনের ভাষ্য ছাত্র জনতা অথবা কোনো কোনো রাজনৈতিক দল থেকে করা হয়েছিল, অন্য একটি দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বাংলাদেশকে অস্থির করার চেষ্টা হচ্ছে। এ ধরনের কোনো ভাষ্য আপনাদের কাছে আছে কিনা। উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা এটিকে আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্য হিসেবেই দেখছি, সেটা সমাধানের চেষ্টা করছি। আজকে চারজন উপদেষ্টা সেখানে যাচ্ছেন। চেষ্টা করছেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে যেন শান্তি বজায় থাকে। যাতে আর সংঘাত বৃদ্ধি না পায়। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলার কিছু বিঘœ সৃষ্টি হয়েছে। তা সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল গত শুক্রবার। আমরা চেষ্টা করেছি সমস্যাটা সমাধান করতে। আশা করি এটাতে সাফল্য অর্জন করবো। তৌহিদ হোসেন বলেন, সেখানে যারাই আহত-নিহত হয়েছে আমাদের মানুষ। একইসঙ্গে এটাও সিদ্ধান্ত আছে যারা জড়িত বলে প্রমাণিত হবে কোন অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা সরকারের অবস্থান। সরকার ঐকান্তিকভাব। চাইছে এটি সমাধান করতে। তৃতীয় কোনো পক্ষের ইন্ধন আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর উত্তর আমি দিতে পারবো না, কারণ কোনো ইন্ধন আছে কিনা আমি জানি না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button