সম্পাদকীয়

পোশাক শিল্পের স্বার্থে দ্রুত স্থায়ী সমাধান জরুরি

তৈরি পোশাক শিল্প আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা। এরপর এই পোশাক শিল্পই দেশের অর্থনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দেশের মোট জিডিপির ১০ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। এরমধ্যে কেবল গত বছরই ৫৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ঢাকা। এই খাতে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান। আর কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশই নারী। যা দেশের নারীদের স্বাবলম্বী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সেই পোশাক শিল্পের প্রধান সেক্টর গার্মেন্টসে চলছে অস্থিরতা। মজুরি বৈষম্যের অভিযোগে মূলত এই অস্থিরতা। বিভিন্ন পোশাক কারখানায় ন্যায্য মজুরি ও বকেয়া বেতন দাবিতে শ্রমিকদের পথে নামা নতুন নয়। কিছু শিল্প মালিকের সক্ষমতা-সদিচ্ছার অভাবে শ্রমিকদের বঞ্চনা ও ভোগান্তি মাঝেমধ্যেই বিক্ষোভে রূপ নিয়ে পথে গড়ায় এবং দেশে-বিদেশে আলোচনায় উঠে আসে। পোশাক শিল্প মর্যাদাবাহী রপ্তানি খাত, যার মাধ্যমে মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় এবং যে শিল্পে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে- সেখানে এমন নিত্য অশান্তি কাম্য নয়। তারা পথে নামলে স্বাভাবিক যান চলাচল বন্ধে ব্যাপক জনভোগান্তি হয়। নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয় গলদঘর্ম। ফলে এর স্থায়ী সমাধান দরকার। আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে একজন নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কজন। অন্যদিকে গাজীপুরের এক কারখানার তিন মাসের বকেয়া দাবিতে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। যদিও এ কারখানায় বকেয়া দাবিতে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তবে শ্রমিক অসন্তোষ, বিক্ষোভ, সংঘর্ষের পেছনে বিশেষ উদ্দেশে তৃতীয় পক্ষ কলকাঠি নাড়ছে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়। সেটা অসম্ভব নয়, কিন্তু নিজেদের দায়িত্বহীনতার দায় থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর এটা চাতুরীর কৌশল কি না তাও ভাবার বিষয়। শ্রমিকদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও নিয়মিত বেতনভাতা পরিশোধ মালিক পক্ষের অবশ্য কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত জরুরি। মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সুসম্পর্কে চিড় ধরলেই অনভিপ্রেত ঘটনার সৃষ্টি হয়, যা কোনো পক্ষের জন্যই কল্যাণকর নয়। তাই মালিক-শ্রমিকসহ সব মহলের সদিচ্ছায় পোশাক শিল্পে শান্তি বজায় রাখতে হবে। নিজেদের পাশাপাশি দেশের স্বার্থেই উৎপাদনমুখী পরিবেশ রক্ষায় যতœবান হতে হবে সব পক্ষকে। বর্তমান অস্থিরতার নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পোশাক শিল্পকে পুরোদমে কাজে লাগাতে হবে। নচেৎ অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button