চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা

১৪ দল এবং জোটের বৈঠকের সিদ্ধান্ত
প্রিবাহ রিপোর্ট ঃ আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন। শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় ১৪ দল এবং জোটের বৈঠক থেকে বের হয়ে এ কথা জানান রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈঠক থেকে বের হয়ে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফরের) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান হায়দার বলেন, আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করতে চাই, প্রধান উপদেষ্টা ক্যাটাগরিকলি বলেছেন, আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের একটা সুনির্দিষ্ট সময়সীমা, তারিখ তিনি ঘোষণা করবেন। এর চাইতে আনন্দের বার্তা আর কিছু হতে পারে না। আজকের মূল বিষয় হচ্ছে এটা। আজকে দেশব্যাপী যে সমস্যা, নৈরাজ্য এর সমাধানে নির্বাচন একমাত্র পথ, এটা উনি (প্রধান উপদেষ্টা), ওনার বক্তব্যে সুস্পষ্ট করেছেন। উনি আশ্বাস দিয়েছেন আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে উনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন। একই প্রসঙ্গ টেনে বৈঠক থেকে বের হয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদেরকে জানান, আগামী অল্প কয়েকদিনের মধ্যে জুলাই সনদের সঙ্গে নির্বাচন কবে হবে এবং প্রক্রিয়া কী হবে, এ নিয়ে অফিসিয়াল ব্রিফিং করে ওনার তরফ থেকে জাতির জন্য পরিষ্কার করে জানানো হবে। প্রধান উপদেষ্টা আজকে আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসে আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখসহ সবকিছু জাতির সামনে তুলে ধরবেন। ‘সামনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করার যে প্রত্যাশা সেটা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। এ কারণে আমরা সবাই প্রধান উপদেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছি। এখন আমাদের প্রত্যাশা আমরা নির্বাচনের তারিখ জানবো। পুরো দেশবাসীকে নির্বাচনের জন্য তৈরি হওয়ার জন্য বলেছেন।’
তিনি বলেন, আজকের আলোচনায় সাম্প্রতিক আইন শৃঙ্খলাবাহিনী নিয়ে যে অপপ্রচার হচ্ছে, এগুলো কারা কীভাবে করছে, এগুলো কীভাবে আমরা দমন করতে পারি, এগুলো নিয়ে আমাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মূলত আমাদের কাছে বর্তমান সংকটের কথা তুলে ধরেছেন। পাঁচ আগস্টের আগে আমরা যখন সবাই এক এবং ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, সেটা যেন আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি সেটা বলেছেন। কোনোভাবে পরাজিত শক্তি যেন মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ না পায়। বৈঠকে ১২ দলীয় জোটের মোস্তফা জামাল হায়দার ছাড়া আরো ছিলেন জাতীয় গণফ্রন্টের আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস, ১২ দলীয় জোটের মোস্তফা জামাল হায়দার, নেজামে ইসলাম পার্টির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ জাসদের ড. মুশতাক হোসেন, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের ববি হাজ্জাজ, জাকের পার্টির শামীম হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাসদ- মার্কসবাদীর মাসুদ রানা ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। এর আগে গত বুধবার দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। তার আগের দিন রাতে প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
পতিত শক্তি নির্বাচনের আয়োজনকে ভন্ডুল করার চেষ্টা করছে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পতিত শক্তি গন্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভন্ডুল করার চেষ্টা করছে। এই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অভ্যুত্থানের সব শক্তি মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে না পারলে- মস্তবড় সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। গতকাল শনিবার বিকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। এসময় ড. ইউনূস বলেন, পরাজিত শক্তি যখনই সুযোগ পাচ্ছে তখনই নানা রকম গন্ডগোল সৃষ্টি করছে। এসব করে তারা দেশের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। তিনি বলেন, যখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি তখনই নানা ষড়যন্ত্র সামনে আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কোনো ষড়যন্ত্র করেই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। কারণ ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে সবগুলো গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য স্পষ্ট। এসময় সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি। উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারাও প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বৈঠকের শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।