সংবিধানের মূলনীতির প্রশ্নে একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো

৭২’র সংবিধান থাকা না থাকা নিয়ে বিভক্তি
প্রবাহ রিপোর্ট : সংবিধানের মূলনীতির প্রশ্নে চতুর্থ দিনেও একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। মূলত বাহাত্তরের সংবিধান থাকা না থাকা নিয়ে তাদের মাঝে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে মৃদু উত্তেজনাও দেখা দেয়। তবে বিদ্যমান সংবিধানের মূলনীতিতে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মতো বিষয়গুলোকে যুক্ত করার বিষয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল একমত। আর বাহাত্তরের সংবিধান থাকবে কী থাকবে না, সেটি নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলেনি কমিশন। সেটি পরবর্তী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানেই আপত্তি বাম দলগুলোর। তারা এটি এখনই সুরাহা করতে চায়। এর মধ্যে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ ডানপন্থি দলগুলো পঞ্চম সংশোধনীর ধারাগুলো রাখার পক্ষে। আর বাম দলগুলোর মন্তব্য- নতুন ধারাগুলো নিয়ে তাদের আপত্তি না থাকলেও বাহাত্তরের মূলনীতিতে হাত দেওয়া চলবে না। তাদের অভিযোগ শব্দের মারপ্যাচে কমিশন বাহাত্তরের সংবিধানকে অপাঙতেয় করার চেষ্টা করছে। আর দিনের আলোচনায় পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠনের পক্ষে মোটামুটি সব দলই একমত। গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মধ্যাহ্নে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান কয়েকটি দলের নেতারা। তবে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন ব্রিফ না করলেও তারা আগেই পঞ্চম সংশোধনীতর আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের পক্ষে মত দেন এবং মূলনীতি বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি সমুন্নত রেখে আমরা নতুন প্রস্তাব যুক্ত করার পক্ষে। কারণ চার মূলনীতি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক। তাই কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সেখানে হাত দেওয়া আমরা মেনে নেবো না। তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, বেশির দল বাহাত্তরের সংবিধান বাদ দেওয়ার কথা বলেছে। আমরা পঞ্চম সংবিধানের পক্ষে। যেখানে গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবদের কথা উল্লেখ ছিল। তিনি এ নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবের পক্ষে একমত পোষণ করেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন সব ক্ষেত্রেই চার মূলনীতি। সেগুলো সমুন্নত রেখেই নতুন ধারা সংযুক্ত করতে হবে। এটি সংশোধনে জাতীয় সংসদের কাছে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এখানেই সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, যদিও আমরা আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের সংযোজন চেয়েছিলাম। তারপরও কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা একমত। গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, ৭২ সংবিধান ছিল এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক। তিনি বাহাত্তরের চার মূলনীতি বাদ দেওয়া ও কমিশন প্রস্তাবিত মূলনীতি প্রতিস্থাপনের পক্ষে মত দেন। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আদর্শগত বিষয়ে চাপাচাপির সুযোগ নেই। বিদ্যমান চার মূলনীতি রেখে ঠিক রেখে সব কিছু করতে হবে। তিনি বিভক্তি তৈরি না করার আহ্বান জানান। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, মূলনীতি চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। কিন্তু সর্ব সম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। বিদ্যমান মূলনীতিগুলো বাদ দেওয়ার দাবি জানান। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, চার মূলনীতিকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাবকে মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধ শুধু আওয়ামী লীগের সম্পত্তি নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করলে অবশ্যই বিদ্যমান চার মূলনীতি ঠিক রাখতে হবে। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এর মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, মূলনীতি নিয়ে কয়েকটি দল অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি করছে। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি একটি দর্শন। রাষ্ট্রের মূল আদর্শে নোট অব ডিসেন্ট করলে হবে না। এটি চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। মৌলিক বিষয়ে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল বলেন, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র একসাথে চলতে পারে না। জাতীয়তাবাদী কারণে অনেক জাতিগোষ্ঠীকে অবমূল্যায়ন করা হয়। এর আগে গত ২৬ জুন সংবিধানের মূলনীতির বিষয়ে এখনও পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি বলে জানিয়েছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি ড. আলী রিয়াজ। তবে তিনি জানিয়েছেন, গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মতো বিষয়গুলোকে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল একমত।