স্থানীয় সংবাদ

ফকিরহাটের বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে শিকার নিষিদ্ধ অতিথি পাখি

আজাদুল হক, বাগেরহাট প্রতিনিধি ঃ বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে শিকার নিষিদ্ধ অতিথি পাখি। শীতের শুরুতেই এক শ্রেণির অসাধু শিকারী পারিজায়ী পাখি শিকারে তৎপর হয়ে উঠেছে। শিকার করা এসব পাখি মোটা মূল্যে স্থানীয় হাট বাজারে বেচা-কেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শীতের শুরুতে খাদ্য ও আশ্রয়ের সন্ধানে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। উপজেলার বিভিন্ন খাল, বিল, জলাশয়ে আশ্রয় নিচ্ছে তারা। উপজেলার বারুইডাঙ্গার বিল, বগুড়ার বিল, কোদলার বিল, হুচলা, ডহর মৌভোগ, মুলঘর, ফলতিতা, কাকডাংগা, কলকলিয়া, কেন্দুয়া বিলসহ আসে পাশের বিভিন্ন জলাশয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে পাখিরা। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির চিহ্নিত অসাধু শিকারিরা ফাঁদ ও জাল দিয়ে পাখি শিকার করছে। এসব পাখি স্থানীয় হাট-বাজারে প্রকাশ্যে এবং গোপনে থলের ভেতরে করে ভ্রাম্যমানভাবে বিক্রি করছে শিকারীরা। প্রতি জোড়া পাখি আকার ভেদে ৩০০ টাকা থেকে শুরু ১ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অতি লাভের আশায় পাখি শিকার ও বেচা-কেনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে এক শ্রেণির অসাধু লোকজন। এই নেটওয়ার্কে থাকা বেশ কয়েকটি দল পরিচিত লোকের মাধ্যমে পাখি বিক্রি করে। পরিচিতজনের মাধ্যমে ফোনে অর্ডার দিলেই নির্দিষ্ট স্থানে মেলে অতিথি পাখি। এলাকার কতিথ এলিট শ্রেণিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এসব পাখি ভক্ষন করে। উপজেলার ফকিরহাট সদর বাজার, ফলতিতা বাজার, মানসা বাজার, টাউন নওয়াপাড়া হাট, কলকলিয়া সহ বিভিন্ন হাট-বাজারে ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ অতিথি পাখির বেচা-কেনা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব পাখির মধ্যে নাইট হেরন, সোনাজঙ্গ, ডুঙ্কর, খেনি, স্নাইপ বা কাদাখোঁচা, খুরুলে, জলকৌড়ি, বুনো হাঁস, বক, সারস, কুনচুষীসহ বিভিন্ন নামের পাখি বিক্রি হয়। এছাড়া দেশি ঘুঘু ও ডাহুক পাখিও বিক্রি করা হয় বলে জানা গেছে। প্রশাসনের নজরদারী এড়াতে পাখি শিকারীরা নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করেন এবং স্থান পরিবর্তন করেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান প্রকৃতি ও পাখিপ্রেমি স্থানীয় লোকজন। এ বিষয়ে ফকিরহাটের বাসিন্দা ও দেশবরেণ্য পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান জানান, প্রতি বছর শীত মৌসুমে সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গলিয়া, ভারতসহ হিমালয় সংলগ্ন নানা দেশ থেকে পরিযায়ী পাখিরা এদেশে এসে আশ্রয় নেয়। বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে যে কোন পাখি ও বন্যপ্রাণি শিকার ও পালন করা দন্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রচার প্রচারণা করা প্রয়োজন। বন বিভাগ ফকিরহাট উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, অতিথি পাখি ধরা ও বিক্রি করার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কাজ করছি। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। এ বিষয়ে ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমনা আইরিন জানান, পাখি শিকার ও বেচা-কেনার সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি নাগরিকদের কাছ থেকে তথ্য প্রদানের জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button