ব্যাংক খাতে সুশাসন জরুরি
দুর্নীতি-অনিয়ম-লুটপাট
দেশের ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির আলোচনা নতুন নয়। ২০১১ সালে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি দিয়ে ব্যাংক খাত ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। এরপর কেলেঙ্কারির নতুন নতুন ঘটনা ঘটেছে। তবে সাম্প্রতিককালে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করে। বেসরকারি বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা ব্যাংক খাত থেকে লোপাট হয়েছে বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ, অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণসহ নানা ধরনের আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি, এসব লুটপাটে শুধু দুর্নীতিবাজদের একটি অংশই নয়, ব্যাংকের কিছু পরিচালক তথা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও জড়িত। কিছু পরিচালকের অনৈতিক হস্তক্ষেপে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণ, কমে যাচ্ছে আয়। অন্যদিকে ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। সব মিলিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে ব্যাংক খাত। খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংক খাত তথা অর্থনীতির মারাত্মক এক ব্যাধি। বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও এর নিরাময়ে সাফল্য অর্জিত না হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় বলে ধরা হয়। বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ ঝুঁকি এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত, এর সমাধানে কী করণীয়, তা-ও বহুল আলোচিত। ২০২৩ সালের সমঝোতা স্মারকের আওতায় ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল, সেগুলো অর্জন তো দূরের কথা, ধারেকাছেও যেতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। উলটো তাদের খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। শীর্ষ খেলাপি ও অন্য খেলাপিদের কাছ থেকে নগদ আদায়ও সন্তোষজনক নয়। আইনের দুর্বল প্রয়োগের কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংক খাতের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে বিশ্বব্যাংক আগেই এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল। আমরা বরাবরই বলে আসছি, আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণ আদায়ে শিথিলতার সুযোগ নেই। এমনিতেই বৈশ্বিক কারণে ডলারের দাম বেড়েছে। রেমিট্যান্স হ্রাস পাওয়ায় এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভের পরিমাণ ক্রমেই কমছে। এ অবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সবল করতে দায়ীদের চিহ্নিত করাসহ খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। ঋণ আদায়ে প্রয়োজনে আইন আরও কঠোর করতে হবে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাও জরুরি।