গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দিন
কমছে শিল্পের উৎপাদন
বাংলাদেশের শিল্প কারখানায় দেখা দিয়েছে গ্যাসের চরম সংকট। এই সংকটের জেরে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শিল্প ক্ষেত্রে। গ্যাসসংকটে পণ্য উৎপাদনের ডেডলাইন পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে কারখানাগুলো। কাক্সিক্ষত উৎপাদন করতে না পারায় আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ছেন শিল্পকারখানার মালিকেরা। এ ছাড়া পোশাক ক্রেতাদের চাহিদামতো সময়ে উৎপাদন সরবরাহ করতে না পারলে অনেক সময় ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বর্তমানে পোশাক খাতের উৎপাদন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেছে। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার নিটওয়্যার রপ্তানিকারকরা গ্যাসসংকটের মধ্যে আছেন। বর্তমানে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কমছে শিল্পের উৎপাদন। এর ব্য়পক প্রভাব পড়ছে রপ্তানিতেও। বিপাকে বাংলাদেশের অর্থনীতি। পাশাপাশি দুশ্চিন্তা বাড়ছে কর্মসংস্থান নিয়েও। ফলে সরকারের থেকে উচ্চমূল্যে গ্যাস কিনতে হচ্ছে শিল্প ও কারখানাগুলিকে। এতে করে শিল্প ও আবাসিক গ্রাহকরা গ্যাস-সংকটে ভুগছেন। পাইপলাইনে গ্যাস না থাকায় আবাসিক গ্রাহকদের বাধ্য হয়ে চড়া দামে এলপিজি সিলিন্ডার, ইলেকট্রিক চুলা ও লাকড়ির চুলা ব্যবহার করতে হচ্ছে। আবার রপ্তানিমুখী শিল্পের মালিকরাও উৎপাদন ধরে রাখা নিয়ে পড়েছেন মহাভাবনায়। বড় ও মাঝারি শিল্প-কারখানার মালিকরা সরকারের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে গ্যাস কিনলেও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় গ্যাসভিত্তিক ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ (শিল্প-কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎ) উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে কারখানাগুলোর উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশে পাইপলাইনে সরবরাহ করা মোট গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বোরো মৌসুমের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সার কারখানাগুলোর উৎপাদন ঠিক রাখতে সেখানেও গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশের এলাকায়, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে। তাছাড়া রাজধানীর অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতেও গ্যাসসংকট চলছে। গ্যাসের চাপ না থাকায় ঢাকার আশপাশের সিএনজি স্টেশনগুলো দিনের বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকছে। দ্রুত গ্যাসসংকটের সমাধান না করলে কারখানা চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এই সংকট দীর্ঘ হলে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। শ্রমিক-কর্মচারীরা বেকার হয়ে যাবেন। যেহেতু দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত পোশাকশিল্প। তাই এই শিল্পে ক্যাপটিভ পাওয়ার, বয়লার ও ওয়াশিং প্লান্টের জন্য গ্যাসের দরকার এবং দেশি গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দিতে হবে। গ্যাস উৎপাদনে জোর তৎপরতা না নিলে গ্যাস-সংকট থেকে ভোক্তা সহজে মুক্তি পাবেন না। বরং সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।