সম্পাদকীয়

চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন পোশাক খাত

দেশের অর্থনীতি বর্তমানে স্থবির। সুসংবাদ নেই বললেও চলে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমশ কমছে। রেমিট্যান্স আসা কমে গেছে। এর প্রভাব সরাসরি অর্থনীতির ওপর পড়ে। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত পোশাক শিল্প চ্যালেঞ্জের মুখে। তারপরও একের পর এর তৈরি হচ্ছে পোশাক কারখানা। ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ছয় বছরে দেশের ৬০৩টি কারখানা সংগঠনের অস্থায়ী সদস্য গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৫৬৫টি কারখানা স্থায়ী সদস্যপদ পেয়েছে (প্রতি বছর গড়ে ৯৪টি)। এর মধ্যে অর্ধেকই গত দুই বছরে নির্মিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখে নতুন কারখানা স্থাপন পোশাক শিল্পের জন্য উপকারী। পোশাক কারখানার পাশাপাশি পোশাক পণ্যের রপ্তানিও বাড়ছে। ছয় বছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। তবে চলতি ২০২৩/২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে গত তিন মাসে রপ্তানি কমেছে। যদিও অর্থবছরের প্রথমার্ধে মোট পোশাক রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। গার্মেন্টস শিল্প হল সেই হংস যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সোনার ডিম দেয়, সবচেয়ে লাভজনক রপ্তানি খাত এবং বিদেশী বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে এবং ৮১ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ আসে বস্ত্র শিল্প থেকে। তাই দেশের অর্থনীতির বিকাশ ও সম্প্রসারণে পোশাক শিল্পের ভূমিকাকে অতিমূল্যায়ন করা যায় না। এ ছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ছে এ খাত। কাঁচামাল আমদানির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নানা সমস্যা। আমদানি ব্যয় বাড়ছে এবং বিশেষ করে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনের খরচ অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত বাড়ছে। শিল্প খাত, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল গঠন করে, বছরের পর বছর ধরে এই পদ্ধতিতে কাজ করে। এভাবে চলতে থাকলে যে কোনো সময় বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় নামতে পারে গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্পটি। পোশাক খাতে বৃদ্ধির হার বজায় রাখতে হলে এবং অর্থনীতিতে এর উন্নয়নের সুবিধা নিতে, বিভিন্ন সহায়তা ব্যবস্থার সুপারিশ করাই যথেষ্ট। তবে রপ্তানি প্রণোদনা বাড়াতে হবে। প্রতিবছরই পোশাক শিল্পে মূল্য সংযোজনের হার রোধসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। পোশাক শিল্পে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকারি সহায়তা অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। তাই সরকারের উচিত পোশাক শিল্পের প্রতি যথাযথ নজর দেওয়া। রপ্তানি বাড়াতে নতুন বৈশ্বিক বাজার খোলার পাশাপাশি দক্ষ আরএমজি কর্মী এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার আধুনিকায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেন ভবিষ্যতে আরএমজি রপ্তানি আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হয়ে উঠতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button