নিত্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ জরুরি

গত ১৪ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিসা রমজানের সময়, বিশেষ করে মজুতদারেরা যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির জন্য জরুরি পণ্য মজুত করতে না পারেন, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন। মন্ত্রীদের নিয়মিত মজুত বিরোধী অভিযান পরিচারনার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখুন’ যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকতে পারেন’। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পবিত্র রমজান এলেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা পুরোনো। এবার শেখ হাসিনা নেতৃত্বের সরকার এমন সময় যাত্রা শুরু করেছে, যখন বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ থাকলেও দামের উত্তাপ বেশি। কাজেই রমজান আসতে আসতে সে দাম কতটা জনগণের সামর্থ্যরে মধ্যে থাকবে তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে না। এজন্য তারা তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। প্রথমত, উৎপাদন ও পরিবহন খরচ কমাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দাম কমানো দরকার। কিন্তু সরকারের পক্ষে সেটা কঠিন। দ্বিতীয়ত আমদানি বাড়িয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানো দরকার, কিন্তু মার্কিন ডলারের সংকটে ব্যবসায়ীরা সহজে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না। ডলারের বাড়তি দামের কারনেও খরচ বেড়েছে। তৃতীয়ত; কিছুকিছু পণ্যের উচ্চ হারে শুল্ক কর রয়েছে। সেখানেও ছাড় দেওয়া সরকারে পক্ষে সহজ নয়। কারণ, সরকার রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্তণ ও নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য খাদ্য, মৎস্য ও পানিসম্পদ ও কৃষিমন্ত্রনালয়ের ও দায়িত্ব রয়েছে। এসব মন্ত্রণালয়কে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে। অতীতে দেখা গেছে, কোনো কোনো মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী তার অধীন খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনের স্বার্থ রক্ষার বেশি ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমান সরকারের নতুন মন্ত্রীদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, তারা ভোক্তা ও উৎপাদকের স্বার্থ সমান ভাবে দেখবেন। প্রয়োজন পণ্য আমদানি করবেন আবার প্রয়োজনে সুরক্ষা দেবেন। মহামারি করোনার কারণে বাজার উর্ব্ধমুখী হবার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপীই নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এর ঢেউ বাংলাদেশেও লেগেছে। ফলে নিম্নবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও খাদ্য সামগ্রী যোগাড়ে চাপের মধ্যে রয়েছেন। শুধু খাদ্য সামগ্রী নয় ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে শিক্ষাপণ্য ও যাতায়াত খরচ বেড়েছে। এমন অবস্থার মধ্যে মানুষ খুব কষ্টে আছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের নতুন মন্ত্রীরা বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন বলে আশা করি। কারণ এবারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বাজার ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে বলা হয়েছে। সে কারনেই বোধ করি প্রধাণ মন্ত্রী শেখ হাসিনা রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে কথা সংশ্লিষ্টদের মনে করিয়ে দিয়েছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যতই চ্যালেঞ্জের হোক না কেন তা গ্রহণ করে সফল হতে হব সরকারকে।