মোকাবেলায় অনুসন্ধান জরুরি

দেশজুড়ে গ্যাস সংকট
সারা দেশে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। যদিও শীতের সময় কারিগরি কারণে গ্যাস সরবরাহ কম থাকে, এটা সবারই জানা। কিন্তু সম্প্রতি চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস-সংকটের কারণে যেভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত ও শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হলো, সেটা ছিল চিন্তারও বাইরে। যেখানে বাংলাদেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট, বর্তমানে সরবরাহ নেমে এসেছে ২৫০ কোটি ঘনফুটের নিচে। অন্যদিকে দৈনিক এলএনজির চাহিদা ৮০ কোটি ঘনফুট, সরবরাহ হয় ৬০ কোটি ঘনফুট। গ্যাস সংকটের কারণ নিজস্ব জ¦ালানির উৎপাদন কমেছে আর আমদানিনির্ভরতা বেড়েছে। দেশে প্রাথমিক জ¦ালানি হিসেবে গ্যাসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। পেট্রোবাংলার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ, শিল্প, সার গৃহস্থলি, সিএনজিসহ ৭টি সেক্টরে চাহিদা দাঁড়াবে ৩ হাজার ৭১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। পেট্রোবাংলার হিসাবেই বর্তমানে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাসের ঘাটতি আছে। ফলে অনেক বাসাবাড়িতে চুলা জ¦লছে না, অনেক সিএনজি স্টেশনের সামনে গ্যাসপ্রার্থী যানবাহনের দীর্ঘ সারি। এমনকি শিল্পকারখানা এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রেও পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের ভুল নীতির কারণেই দেশে জ¦ালানিসংকট ঘনীভূত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কম ছিল, তখন সরকার তেল আমদানি করে বেশি দামে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেছে। এখন ভোক্তারা বেশি দাম দিয়েও জ¦ালানি পাচ্ছেন না ডলার-সংকটের কারণে। বিশেষজ্ঞরা বহু বছর ধরেই নতুন গ্যাসক্ষেত্রে অনুসন্ধানের কথা বলে আসছিলেন, কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি। তারা কম দামে এনে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা করেছে। প্রকৃতপক্ষে সরকারের পরনির্ভরশীল নীতির কারণেই পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে। বাংলাদেশে নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ না থাকা এবং আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধির কারণেই সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হয়েছে, কিন্তু নিজস্ব কয়লা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে ভারত ও মিয়ানমার ভালোভাবে করলেও বাংলাদেশের সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলন হয়নি, অনুসন্ধানও হয়নি। ফলে আমদানির ওপর নির্ভর না করে জরুরি ভিত্তিতে দেশি উৎসগুলোর অনুসন্ধান চালাতে হবে। অনুসন্ধান বাড়ানোটাই হবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের সর্বোত্তম উপায়। যথেষ্ট পরিমাণ অনুসন্ধান করতে হবে। কূপ খনন করে যেতে হবে। নয়তো এ গ্যাস সংকট থেকে কখনোই উত্তরণ ঘটবে না। তাই সামগ্রিকভাবে অনুসন্ধান কাজকে আরো জোরালো করতে হবে।