অগ্নিঝুকিতে থাকা ভবন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক

রাজধানীতে একের পর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। মানুষ পুড়ে মরছে। কিন্তু সেসব দুর্ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত, বিচার বা প্রতিকার মানুষ আজও পান নি। সর্বশেষ ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে আগুন লেগে ৪৬ জন মারা গেছেন। ২০১০ সালে অগ্নিকান্ডে নিমতলিতে ১২৪ জন, ২০১৯ সালে চকবাজারে ৭১ জন ও বনানীর এফ আর টাওয়ারে ২৭ জন প্রাণ হারান। এছাড়া হাসেম ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজ, তাজরীন ফ্যাশনসহ এর আগে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা থেকে বেইলি রোডের দুর্ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন করে ভাবার উপায় নেই। বরং এসব আগের দুর্ঘটনাগুলোরই ধারাবাহিকতা। মূলত দুর্ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যে চরম অবহেলা দায়ী বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষণ মহল। বেইলি রোডে দুর্ঘটনার শিকার ভবনটিকে রাজউক শুধু বাণিজ্যিক ব্যবহারের শর্তে অনুমোদন দিয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ভবনটিকে অগ্নিকান্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনবার নোটিশ পাঠিয়েছে। কিন্তু ভবন কর্তৃপক্ষ সচেতন না হওয়ায় তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। ফায়ার সার্ভিসের নোটিশের কপি সিটি কর্পোরেশন ও রাজউকে দেওয়া হলেও তারা নির্বিকার থেকেছেন। ফলে ৪৬ টি তাজা প্রাণ পুড়ে মারা গেলো। বেইলি রোডের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ঢাকায় ২৬০০ ভবনে অগ্নিসংযোগ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করছে। এর মধ্যে বিপণি বিতান, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন ও গণমাধ্যম অফিস রয়েছে। এদিকে রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডী, মিরপুর ও উত্তরায় প্রায় অর্ধশত রেস্তোরায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ গত ৩ মার্চ সন্ধ্যায়। অভিযানে কয়েকটি রেস্তোরার ব্যবস্থাপক কর্মীসহ অন্তত ২২ জনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে বেইলি রোডের ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করে অসচেতনতা বশত হত্যা মামলা করা হয়েছে। এদিকে ৪ মার্চ সংস্থাগুলো যে যার মতো অভিযানে নেমেছে। ধানমন্ডি একটি ভবনে রাজউক অভিযান চালিয়ে ১৪ টি রেস্তোরা বন্ধ করেছে এবং একটি ভেঙে ফেলেছে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডে একটি ভবন সিলগালা করেছে এবং ১১ টি রেস্তোরা বন্ধ করেছে। পুরান ঢাকায় ওয়ারীতে পুলিশ ১৪ টি রেস্তোরায় অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে আটক করেছে। বাংলাদেশে সবকিছুই দেরি করে ঘটে। ঘটনা ঘটে যাবার পর ক’ দিন নানা দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়। তারপর সব থেমে যায়। বিগত দিনের ঘটনাগুলো তদন্ত হলেও কাউকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয় নি। ফলে কেউ শান্তি পায় নি। এবারও ব্যতিক্রম কিছু নয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের ২৬০০ ভবন অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে থাকা তথ্যানুসারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণের একটা সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। যদি সংশ্লিষ্টরা সচেতন হন। যে কোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। আর দুর্ঘটনায় মৃত্যু কারো কাম্য নয়। সবার আগে মানুষের জীবন। সেজন্য আমরা মনে করে ফায়ার সার্ভিসের তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি বিল্ডিংয়ে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। শুধু জেল, জরিমানা নয়, চাই সত্যিকারের প্রতিকার। ঘটনা ঘটে যাবার পর নয়, বরং ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে সে ব্যাপারে সচেতন হলেই সব কুল রক্ষা পাবে। অহেতুকু প্রাণ হারাতে হবে না মানুষকে। আশা করবো সংশ্লিষ্টরা তাদের দায়িত্বের প্রতি সচেতন হবেন।