সম্পাদকীয়

পরিবহন খাতে দুর্নীতি বন্ধই আসল কথা

মুখোমুখি টিআইবি-বিআরটিএ

নিবন্ধন ও সনদ হালনাগাদে ৫২ শতাংশ বাসকে ঘুষ দিতে হয়। এভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ বছরে ৯০০ কোটি টাকা ঘুষ আদায় করে। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এমন একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে সংবাদ সম্মেলন করেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। পাশাপাশি এ বিষয়ে টিআইবির ব্যাখ্যাও দাবি করেন তিনি। তারই প্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, বাস্তবতা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে সত্যকে অস্বীকার করা হয়েছে। এ দৃষ্টান্ত অনিয়ম-দুর্নীতিকে সুরক্ষা দেওয়া এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ঘোষিত দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ঝুঁকি বিবেচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে টিআইবি। এতে জানানো হয়, টিআইবির গবেষণাটি সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণার প্রতিষ্ঠিত রীতি অনুসরণ করে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও এ বিষয়ে অভিজ্ঞ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি বর্তমান ও সাবেক কর্মীসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সেবাগ্রহীতা, বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে গুণগত ও পরিমাণগত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে সম্পন্ন করা হয়েছে। গবেষণার অন্তর্ভুক্ত জরিপে বাস মালিক, কর্মী-শ্রমিক ও যাত্রীদের কাছ থেকে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকে ৩২টি জেলা প্রতিনিধিত্বশীল নমুনায়নের মাধ্যমে নির্বাচন করে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিআরটিএ চেয়ারম্যান মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন উল্লেখ করে বলা হয়, এ গবেষণার তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিআরটিএর চেয়ারম্যান অথবা তার মনোনীত প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য টিআইবির নির্বাহী পরিচালক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বরাবর প্রেরণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য গবেষণা দলকে ডাকলেও তিনি তার কার্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। দেশের সড়ক পরিবহন খাতে দীর্ঘদিন ধরেই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বারবার বিষয়টির প্রতি দৃষ্টিপাত করা সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতির কোনো লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এ নৈরাজ্য এখন আর কমার অবস্থায় নেই। দেশের, বিশেষ করে রাজধানীর গণপরিবহন খাতে যে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাকে এক কথায় ভয়াবহ বললেও কম বলা হবে। পরিবহন চালকদের অধিকাংশই অদক্ষ, প্রশিক্ষণহীন ও লাইসেন্সবিহীন। বাস, মিনিবাসের বড় অংশেরই নেই ফিটনেস। যাত্রী পরিবহনে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত তারা। এ কারণে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। শুধু দুর্ঘটনাই নয়, গণপরিবহণে যাত্রী হয়রানি ও প্রতারণা নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রীতিমতো জোচ্চুরি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পরিতাপের বিষয়, বছরের পর বছর এ ধারা চলে এলেও তা বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ খাতে বিভিন্ন পর্যায়ে চলা চাঁদাবাজি ও অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে সিটি করপোরেশন, হাইওয়ে পুলিশ, মালিক-শ্রমিক সংগঠনের যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। আমরা মনে করি, বিআরটিএ তার নির্ধারিত ভূমিকা রাখতে স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থতা ঢাকতে সংস্থাটি জনবল সংকটের কথা বললেও কর্তাব্যক্তিদের মধ্যেও কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি ও অনৈতিক সুবিধার অংশীদার রয়েছে কিনা, তা তদন্তের দাবি রাখে। আমরা আশা করি, টিআইবির প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি না দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, সবাইকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button