থামছেনা কিশোর গ্যাঙয়ের দৌরাত্ম

দেশে ক্রমবর্ধমান কিশোর অপরাধ সমাজে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায় কথিত বড়ভাইদের ছত্রছায়ায় গজিয়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের নানা অপকর্মের খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বয়ঃসন্ধিক্ষণ কালে (৯-১৭) বছর বয়সের শিশুরাই বেশি কিশোর গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ে। অথচ এ বয়সটা যে শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে মানসিক বিকাশ-নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষায় নিজেকে গড়ে তোলার মূল সময়। কিশোর গ্যাং বলতে মূলত ২০-২২ বছর কিংবা তার কম বয়সের কয়েকজন সংঘবদ্ধ কিশোরকে বোঝায়, যারা নিজেরা সংঘবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। কিশোর গ্যাং কালচার বর্তমানে শুধু শহরের গলিতেই সীমাবদ্ধ নেই, এর ভয়াল চিত্র দেখা যাচ্ছে গ্রামাঞ্চলেও। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বস্তুত কিশোর গ্যাং এখন এক আতঙ্কের নাম। তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে এরা অহরহ খুন-খারাবি করছে। এ অবস্থায় কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সবার আগে প্রয়োজন কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকদের দমন করা। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা। এমতাবস্থায় সরকারকে নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। কিশোর অপরাধ রোধে রাজনৈতিক উচ্চ পর্যায় থেকে প্রশাসনের সর্বস্তরে সদিচ্ছা থাকতে হবে। প্রচলিত শিশু আইনে কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া জটিল মনে হলে প্রয়োজনে আইনের সংস্কার করতে হবে। কিশোর গ্যাং নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। টিকটক ও লাইকির মতো এমন অনেক অ্যাপস আছে যা উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে এসব বিতর্কিত অ্যাপস প্রয়োজনে বন্ধ করা যেতে পারে। এলাকাভিত্তিক পাঠাগার, খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও বিনোদন ব্যবস্থা করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা এলাকার ওয়ার্ড পর্যায়ে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে সিটিজেন মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। পাশাপাশি কিশোর অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রগুলি আধুনিকায়ন করে সেখানে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে। যারা কিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী, তাদের জন্যও কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি আগামী প্রজন্ম যাতে সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে, তা নিশ্চিতে সবাই আন্তরিক হবেন-এটাই প্রত্যাশা।