সম্পাদকীয়

পাসপোর্ট অফিসে থামছে না দালালের দৌরাত্ম্য

পাসপোর্ট করতে গেলে ভোগান্তির শেষ নেই। নিজে নিজে পাসপোর্ট করাটা খুবই কষ্টকর। পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে দালালের অভাব নেই। জোঁকের মতো পিছে লেগেই থাকে। অফিসের কর্মকর্তারাও দালালের সঙ্গে জড়িত। যেখানে তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে দেশকে গড়ে তোলাই মূলত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল উদ্দেশ্য। জনগণকে মুহূর্তের মধ্যে কোনরকম হয়রানি ছাড়া প্রয়োজনীয় সকল তথ্য নিমিষেই হাতের নাগালে দেওয়া। কিন্তু ডিজিটালাইজেশনের নামে কিছু সেমি-ডিজিটাল পদ্ধতি চালু থাকায় জনগণের সুবিধার চেয়ে বেশি পরিমাণ অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমান সময়ে বিশ্ব যেখানে হাতের মুঠোয় সেখানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের পাসপোর্ট থাকা অত্যাবশ্যকীয়। পাসপোর্ট করতে গিয়ে জনগণ যে হয়রানির শিকার হয় সেটা বলে শেষ করা যাবে না। বিশেষ করে জেলা শহরের পাসপোর্ট অফিসগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। অনেক সময় বাড়তি টাকা ছাড়া পাসপোর্ট মেলে না। একদিকে দালাল চক্রের অর্থবাণিজ্য, অন্যদিকে পাসপোর্ট অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়মের কারণে জিম্মি হয়ে পড়তে হয় পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের। দেশের অনেক আঞ্চলিক অফিসে যেন ঘুরছে ছকে বাঁধা ঘুষ-দুর্নীতির চরকি। এমনকি দালালদের দৌরাত্ম্য এতই বেপরোয়া যে, তারা নিজেরাই দিচ্ছেন পুলিশ ভেরিফিকেশন। কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত দালাল চক্র পাসপোর্ট করতে আসা লোকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রায় দুর্নীতির কথা সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। দুর্নীতি রোধে মাঝে মাঝে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা গেলেও কিছুদিন পরই দেখা যায় সবকিছু চলছে আগের মতোই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একদিকে কড়াকড়ি করলে আরেক দিকে খুলে যায় দুর্নীতির নতুন পথ। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট সেবাগ্রহীতারা। র‌্যাব ও পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়ে দালালদের গ্রেপ্তার, পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নামপরিচয়ে বানানো নকল সিল জব্দ করলেও বন্ধ হয় না তাদের দৌরাত্ম্য। প্রত্যেক দালালের আলাদা আলাদা কোড নম্বর রয়েছে। ফলে আবেদন জমা হলেই অফিস কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন আবেদনটি কোন দালালের মাধ্যমে জমা হয়েছে। কৌশল করে দালালরা আবেদনকারীকে দিয়ে সরকারি ফি ব্যাংকে জমা করায়। দালালরা পুলিশ ভেরিফিকেশন বাবদ টাকা নেওয়ার কারণ খোঁজ করে জানা গেছে, তারা নিজেরাই পুলিশের সিল বানিয়ে স্বাক্ষর দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। পাসপোর্ট অফিস তা যাছাই করে না। যেখানে সমগ্র বিশ্বে পাসপোর্টপ্রাপ্তি নাগরিক অধিকারগুলোর অন্যতম। অথচ এ অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে অনিয়মের শিকার হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ। তাই সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি, ভোগান্তি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পাসপোর্ট পেতে পারে, সে জন্য প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে অভিযান পরিচালনা এবং নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন। কোনো রকম হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়া পাসপোর্ট পেতে পারে, সেজন্য সরকার পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ এর সব আঞ্চলিক অফিস দুর্নীতিমুক্ত করার পদক্ষেপ নেবে- এটাই আমাদের কাম্য।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button