৯৯৯ সেবার মান যুগোপযোগী করতে হবে
‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’ বাংলাদেশ পুলিশের যুগান্তকারী জনবান্ধব সেবা হিসেবে দেশের জনগণের বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ যুগে বাংলাদেশ পুলিশ তথা বাংলাদেশ সরকারের একটি স্মার্ট সেবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯। হেল্পলাইনটি চালু হওয়ার পর ২০১৮ সালে ৯৯৯-এ এক বছরে কল এসেছিল ৪৯ হাজার ৭১৯টি। আর এখন প্রতি মাসে কল আসে ২২-২৩ হাজার। সম্প্রতি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ তার প্রতিষ্ঠার সপ্তম বছরের শেষের দিকে। এই সময়ের মধ্যে ৯৯৯ সর্বস্তরের মানুষের আস্থার এক নাম হয়ে উঠেছে। বিপদে, সংকটে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুল্যান্সসেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেবা দেওয়া হয়েছে নারীদের যৌন নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ বন্ধ, পতিতাপল্লী থেকে যুবতিদের উদ্ধার, ধর্ষণকারীকে শাস্তির আওতায় আনার ক্ষেত্রে। পাচার প্রতিরোধে ৯৯৯-এর ভূমিকা অতুলনীয়। বর্তমানে ছয় ধরনের সহযোগিতা চাওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি কল আসে মারামারি ঘটনায়। এ ছাড়া শব্দদূষণ, অগ্নিকা-, নারীর প্রতি সহিংসতা ও দুর্ঘটনার বিষয়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কল আসে। বর্তমানে ৯৯৯ হেল্পলাইনে ১০০টি ওয়ার্কস্টেশন রয়েছে এবং একবারে ১২০টি কল রিসিভ করতে পারে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো প্রায় সাত বছরেও এটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিটে রূপান্তর হতে পারেনি। চলছে জোড়াতালি দিয়ে। যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন তাঁদেরও পোস্টিং অন্যত্র। সেখান থেকে বেতন-ভাতা পান তাঁরা, কিন্তু দায়িত্ব পালন করছেন হেল্পলাইনে। পূর্ণাঙ্গ একটি ইউনিট গঠনের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর পর মিলছে না ইতিবাচক সাড়া। ইউনিট গঠনের জন্য নেই আলাদা বাজেটও। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এই সেবাটির জন্য কম্পিউটারের একটি মাউস কিনতে হলেও দ্বারস্থ হতে হয় পুলিশ টেলিকমের কাছে। পত্রপত্রিকার খবরাখবর থেকে জানা যায়, পুলিশ টেলিকমের অধীন পরিচালিত না হয়ে একটি আলাদা ইউনিট করার জন্য পুলিশের তরফ থেকে ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫৪৯ জনবলের অনুমোদন দেয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হলেও এখনো তার অনুমোদন হয়নি। জরুরি হেল্পলাইনের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ গণমাধ্যমে বলেন, হেল্পলাইনটিকে পৃথক ইউনিট হিসেবে অনুমোদন পেলে এর আপডেটেড সফটওয়্যারসহ হেল্পলাইনটি আরো দক্ষতার সঙ্গে সবাইকে সেবা দিতে পারবে। বর্তমান আধুনিক যুগে সবাই আপডেট হওয়ার প্রতিযোগিতা করছে। অথচ আমাদের এমন একটি জয়প্রিয় সেবামূলক কার্যক্রমে বিগত ছয় বছরেও কোনো উন্নতির ছোঁয়া পায়নি; যা রীতি মতো অবাক করার মত। বিগত বছরেগুলোতে পরিকল্পনা করে থাকলেও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে মানুষ বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই এই সেবার মান উন্নয়ন করাটা জরুরি বলে আমরা মনে করছি। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার ওই বিষয়ে নজরদারি করে একটি যৌক্তিক সমাধান গড়ে তুলবেন।