জড়িতদের চিহ্নিত করুন
বিদেশে অর্থপাচার
বিগত সরকারের আমলে বছরে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে মত অনেকের। রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে বিগত সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীরা ব্যাংক খাত ও বাণিজ্যের আড়ালে এ অপকর্ম করেছেন। কাজেই পাচারের অর্থ ফেরানো নতুন সরকারের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সহায়তা চাইলে বিশ্বব্যাংক এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বিশ্বব্যাংকের সহায়তা কাজটিকে বেশ সহজ করে দেবে বলেই প্রত্যাশা। কারণ যেসব দেশে অর্থ গেছে, সেসব দেশের আইনকানুন, আন্তর্জাতিক আইন ও তদন্ত প্রক্রিয়া এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে বিশ্বব্যাংক চাইলে তা সম্ভব। কারণ তাদের তদন্ত সক্ষমতা এবং ফরেনসিক সাপোর্টসহ সব ধরনের সক্ষমতা আছে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এর পাশাপাশি আরও বলেছেন, অন্যান্য খাতের সঙ্গে বাংলাদেশে বাণিজ্য খাতে সংস্কারও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চাইলে বিশ্বব্যাংক এখানেও সহায়তা দিতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্যে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে। ইতঃপূর্বে প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের সময় পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহায়তাও চেয়েছেন। এছাড়া এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থসম্পদ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দেশে চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। বস্তুত, গত ১৫ বছরে প্রভাবশালীরা দেশের আর্থিকসহ প্রায় সব খাতেই নজিরবিহীন লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। দুঃখজনক হলো, এ কাজে বিগত সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য, আমলা ও ব্যবসায়ীরা ছিলেন সামনের সারিতে। সন্দেহ নেই, দেশের ব্যাংক খাতসহ সার্বিক অর্থনীতিতে সংকটের পেছনে এ অর্থ পাচার অনেকাংশে দায়ী। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কতটা সফলতা পাবে, সময়ই তা বলে দেবে। এক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যারা অর্থ পাচার করে থাকেন, তাদের অধিকাংশই বেনামে ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তা করেছেন। তাই যারা অর্থ পাচারের পেছনে রয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করা জরুরি। সুযোগসন্ধানী যারা এখনো অন্তরালে এ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদেরও চিহ্নিত করা এবং আইনের আওতায় আনা দরকার।