সম্পাদকীয়

প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য এখনকি বিলাসিতায় পরিণত হলো?

দেশে নিত্যপণ্যের দাম এতটাই বেড়েছে যে, তা কম আয়ের মানুষের কাছে সেগুলোকে বিলাসবহুল বলে মনে হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হয়ে পড়ছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবে আপস মানতে চায় না। আগে মানুষ দুটি জিনিসের মূল্য বিষয়ে ভাবত। সেগুলো হলো পেঁয়াজ এবং কাঁচামরিচ। অনেকে আগেভাগে ক্রয় করে সংরক্ষণ করত। এ বছর তা কিন্তু হয়নি। পেঁয়াজ-কাঁচামরিচের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও কাঁচামরিচের মূল্য প্রতিদিনই বাড়ছে। বর্তমানে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ডিম। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিলেও এখনো সাধারণ জনগণ দিশাহারা। কারণ বর্তমানে বাজারে প্রায় কাঁচা তরকারির দাম ১০০ টাকার ক্রস করেছে। এ অবস্থায় বেশি বেকায়দায় আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকরা। তারা আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের তাল মেলাতে পারছে না। বাজারে গিয়ে মানুষ হতভম্ব হয়ে যাচ্ছে। সবকিছুর দাম আগের চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ১৭টি দেশের নিত্যপণ্যের দাম বিশ্লেষণ করে বলছে, খাবারের পেছনে সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু খরচ করে বাংলাদেশের মানুষ। ঢাকায় চালের দাম থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের তুলনায় বেশি। দেশের মূল্যস্ফীতির হার শ্রীলঙ্কার চেয়েও বেশি। ২০১৯ সালের তুলনায় মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ, পাইজামের ১৫ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ মুনাফাখোররা বেশি লাভ সেখানে করছে, যে পণ্য গরিব ও মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করে এবং বাজারে বেশি বিক্রি হয়। ২০১৯ সাল থেকে খাদ্যমূল্য বিবেচনা করলে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি। আয় কম, কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়, যার ভুক্তভোগী গরিব ও সাধারণ মানুষ। ধনী ও গরিবের বৈষম্য বেড়েছে। গরিবের আয় বাড়েনি। জিডিপিতে জাতীয় আয় বাড়ছে, কিন্তু কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখতে পারছে না। মানুষের শ্রেণিভেদের কথা না ভেবে সবাইকে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা বড় ধরনের ব্যর্থতা। বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কারণে দেশের অর্থনীতি বর্তমানে বেশ চাপে আছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার দিকে নজর দিতে হবে। সদাশয় সরকারই পারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে। যারা দায়িত্বে রয়েছে তারা যদি আন্তরিক না হয় তাহলে যেই লাউ, সেই কদুই থেকে যাবে। মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button