সম্পাদকীয়

সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি

সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। যে সব খাদ্য মানুষের প্রয়োজনীয় সার্বিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে তাদেরকে সুষম খাদ্য বলা হয়। সুষম খাদ্য বলতে আমরা বুঝি শর্করা, আমিষ, স্নেহ, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি- সবকিছুর সম্মিলন। সুস্থ ও নীরোগ থাকার জন্য আমাদের নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ দরকার। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে, মানুষের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা এবং প্রতিদিনের কাজ-কর্মের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি এবং পুষ্টির যোগান দিতে সক্ষম সুষম খাদ্য। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন আমাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টি এবং ক্যালরি গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। সুষম খাদ্য আমাদের সেই প্রয়োজনীয় শক্তি এবং পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। এজন্য প্রতিদিন সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সেই দৈনন্দিন পুষ্টি এবং ক্যালরির চাহিদাকে সঠিকভাবে পূরণ করে রাখার মাধ্যমে দেহকে সুস্থ রাখতে পারি এবং একই সাথে নানা ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগ-সমস্যা থেকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে পারি। শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাকে বজায় রাখতে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং ক্যালরির চাহিদাকে পূরণ করতে গ্রহণ করা খাবারের মাঝে একটি সুষম বণ্টন থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। তা না হলে খাবারের সাথে সাথে শারীরিক পুষ্টির মাঝে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবার সুযোগ বেড়ে যাবে। যা থেকে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেবার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে, যা চূড়ান্তভাবে শরীরে নানা প্রকার রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবে এবং অন্যান্য রোগে শরীরকে আক্রান্ত করে তুলতে পারে। কিন্তু এই সুষম খাদ্যের ব্যাপক সংকট রয়েছে আমাদের দেশে। আমাদের দেশে বর্তমানে কাউকে ক্ষুধার্ত না থাকতে হলেও পুষ্টির ক্ষুধা মিটছে না কোনোভাবে। দেশের সাধারণ মানুষ আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার যেমন- মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, কলা, আঙুর, আপেল ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারছে না বা পরিমাণে কম গ্রহণ করছে। প্রতি বছর দেশে প্রায় চার কোটি টন চাল উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু খাদ্য হিসেবে আমাদের শুধু কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা খেলে চলবে না, প্রয়োজন সুষম খাদ্য। বাংলাদেশে মাথাপিছু চালের ভাত গ্রহণ হার হিসেবে মোটামুটি দৈনিক যে পরিমাণে পুষ্টি আমরা চাল বা ভাত থেকে পাই, তা কোনোভাবেই আমাদের চাহিদার সমান নয়। এ কারণে খাদ্যের চাহিদা মিটলেও পুষ্টির চাহিদায় পূরণে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর প্রায় দু-তৃতীয়াংশই কোনো না কোনো মাত্রার অপুষ্টিতে ভুগছে। এর মধ্যে শতকরা ১৪ ভাগ শিশু ভুগছে মারাত্মক অপুষ্টিতে। এর কারণ পুষ্টি সচেতনতার অভাব অথবা পুষ্টিকর খাবার ক্রয় করার অসামর্থ্য। এই অপুষ্টি দীর্ঘমেয়াদে দেশের উৎপাদনশীলতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ অবস্থায় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পুষ্টি চাহিদা মেটানোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে সরকারকে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button