সম্পাদকীয়

আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে শিল্পের উন্নয়নের ওপর। দেশের শিল্প উন্নত ও আধুনিক না হলে যেকোনো দেশই অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দেশের জন্য এই সত্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশ এখন শিল্পে অনেক এগিয়েছে। বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে দেশীয় শিল্প বিকশিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও জোয়ার আসবে। দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখা কঠিন হবে না। উচ্চ সুদের হার, শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে দেশে বিনিয়োগ স্থবিরতা চলছে। এর ফলে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। আর তলানিতে এসে ঠেকেছে শিল্পোৎপাদন। কারখানায় বিক্ষোভ, হামলা-মামলার কারণে ভারী শিল্প, পোশাক ও টেক্সটাইল খাত মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে। অর্থনীতিতে বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রায় তরুণদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির চাহিদার মধ্যে নানামুখী সংকটে জর্জরিত উদ্যোক্তারা। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত না হওয়ায় নতুন বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে নীতি সুদহার বাড়ানোয় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যাংকঋণের সুদহারও। এতে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা। অতিরিক্ত সুদের চাপে কমতে পারে বিনিয়োগ, কমবে কর্মসংস্থানও। চলমান অস্থিরতায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতেও ধস নেমেছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, ভয়াবহ করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে মাজা সোজা করে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দামে উল্লম্ফনে উচ্চ মূল্যস্ফীতির বোঝা এখনো বয়ে চলেছে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ। গত বছরের প্রথম দিকে যুদ্ধের প্রভাবে কাঁচামাল আমদানিতে সংকট দেখা দেয়। এরপর ডলার সাশ্রয়ে আসে আমদানিতে কড়াকড়ি। সময়মতো এলসি করতে না পারা, জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে কারখানার উৎপাদন নেমেছে শূন্যের কোঠায়। জ্বালানি সংকটে উৎপাদন ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বন্ধ ছিল। আগস্ট-সেপ্টেম্বর টানা দুই মাস সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী ও গাজীপুরের পুরো শিল্পাঞ্চলে চরম অস্থিরতা ছিল। অক্টোবরে এসে বড় পরিসরের অস্থিরতা থামলেও মাঝেমধ্যেই ঘটছে সহিংসতা। বিদেশি ক্রেতারা উদ্বেগ জানাচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে নতুন রপ্তানি আদেশ অন্য দেশে সরিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি। বিশ্বায়নের এই যুগে শুধু দেশীয় বিনিয়োগের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ এলে দেশের অর্থনীতিতে যেমন নতুন গতির সঞ্চার হবে, তেমনি নতুন নতুন বিদেশি বিনিয়োগের পথ সুগম হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button