সম্পাদকীয়

মহান স্বাধীনতা দিবস: আত্মত্যাগের মহিমান্বিত অধ্যায়

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা ঘটে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অতর্কিত হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। এরপর তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। আজকের দিনে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি ৩০ লাখ শহিদ, দুই লাখেরও বেশি নির্যাতিত মা-বোন এবং জাতীয় নেতাদের, যাঁদের আত্মত্যাগে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতার অর্জনকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে আমরা কতটুকু সফল হয়েছি? তা নিয়ে থেকে যায় প্রশ্ন। স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠন করা, যেখানে প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা ও অধিকার নিশ্চিত হবে। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও, স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনার পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো অনেকাংশে অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও এর সুফল সবার মাঝে সমানভাবে পৌঁছায়নি। এখনও দেশের একটি বড় অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও সম্পদের অসম বণ্টন প্রবল হয়ে উঠেছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন, চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিÑএগুলো আজও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়ে গেছে। গণতন্ত্রের ক্ষেত্রেও স্বাধীনতার লক্ষ্য অনেকটাই অনির্দিষ্ট হয়ে পড়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা সংকটের মুখে, বাক্স্বাধীনতা হ্রাস পাচ্ছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে। বিভিন্ন কঠোর আইন নাগরিকদের অধিকার হরণের আশঙ্কা তৈরি করেছে। একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, নৈতিকতা ও আইনগত স্বচ্ছতা। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা, যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। স্বাধীনতা দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোকÑস্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকব। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা সবাই মিলে কাজ করব। তাহলেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ সত্যিকারে বাস্তবায়িত হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button