সম্পাদকীয়

২০ শয্যার হাসপাতাল: অবকাঠামো আছে, সেবা নেই

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিগত এক দশকে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রাম ও তৃণমূল পর্যায়ে হাসপাতাল নির্মাণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার যে লক্ষ্য সরকার নিয়েছিল, তা ভুক্তভোগীদের জন্য আশার আলো জাগিয়েছে। তবে খানসামা উপজেলার সদরে ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের বাস্তবতা দেখলে একরকম বেদনার ছাপ দেখা যায়। ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর খানসামা সদরের এই হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়Ñকিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজও এটি চিকিৎসাসেবা দিতে পারছে না কেবল জনবল নিয়োগ না হওয়ায়। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এই হাসপাতালটি বছরের পর বছর তালাবদ্ধ পড়ে থাকায় জনগণের করের টাকায় নির্মিত এই প্রতিষ্ঠানটি যেন এক ‘বিলাসী অবকাঠামো’য় পরিণত হয়েছে। হাসপাতালটি চালু হলে খানসামার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও আশপাশের উপজেলা যেমন বীরগঞ্জ, দেবীগঞ্জ ও নীলফামারীর মানুষও চিকিৎসাসেবা পেতেন। কিন্তু বাস্তবে তা না হওয়ায় একদিকে যেমন স্থানীয় মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার ফলে যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ছে, এমনকি কিছু চুরিও হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে জনবল নিয়োগের জন্য চিঠি দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এটি শুধু স্থানীয়দের প্রতি অবিচার নয়, বরং জাতীয় সম্পদের অপচয় বলেই গণ্য হওয়া উচিত। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালের আর্থিক কোড চালু করে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। একজন আবাসিক চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স, টেকনিশিয়ান, নিরাপত্তাকর্মীÑসব পর্যায়ে দক্ষ ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ ছাড়া হাসপাতালটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। একইসঙ্গে হাসপাতালের বিদ্যমান অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসেবাকে বাস্তবিক অর্থে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে শুধু নির্মাণ নয়, বরং সেবাদান-প্রক্রিয়াকে কার্যকর করার দিকেই জোর দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। খানসামা সদরের এই হাসপাতাল যেন আর একটি ‘প্রদর্শনীর অবকাঠামো’ হয়ে না থাকে, সেটাই আজ সময়ের দাবি।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button