সম্পাদকীয়

চালের বাজারে অস্থিরতা, সরবরাহ বাড়লেও কেন দাম বাড়ছে?

চাল বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য। তাই এই পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধি শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, তা সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে চাল আমদানিতে অভূতপূর্ব ২০৫১ শতাংশ বৃদ্ধি সত্ত্বেও বাজারে দাম বেড়েই চলেছেÑযা সত্যিই বিস্ময়কর এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৮ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অথচ বাজারে এর কোনো ইতিবাচক প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে ঢাকার বাজারে সূক্ষ্ম জাতের চালের মূল্য প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে, যা নি¤œ আয়ের মানুষদের জন্য বড় বোঝা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তিন দফা ভয়াবহ বন্যা কৃষি উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ ১১টি জেলায় প্লাবন পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। এ কারণে বাজারে খাদ্য সংকটের সম্ভাব্যতা এড়াতে আমদানি বাড়ানো হয়েছে। আবার বোরো মৌসুমে চাল ও ধানের সংগ্রহমূল্য বাড়িয়ে কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতেরও চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলো নিঃসন্দেহে ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়Ñসরবরাহ বাড়লেও বাজারে দামের এই ঊর্ধ্বগতি কেন? অর্থনীতিবিদরা যেমন বলছেন, বাজার ব্যবস্থাপনার ঘাটতি, মজুতদারির প্রবণতা এবং সরকারি গুদাম থেকে সরবরাহে ধীরগতিই মূলত এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ। আমদানির জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হলেও এর সুফল জনগণ পাচ্ছে নাÑএটি একটি নীতিগত ব্যর্থতা। এই পরিস্থিতিতে কেবল আমদানির ওপর নির্ভর না করে বাজার মনিটরিং জোরদার করা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য রোধ করা এবং গুদামজাত চালের সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করাই হবে টেকসই সমাধানের পথ। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, গোপন মজুত ও সরবরাহে স্বচ্ছতার অভাব যতদিন থাকবে, ততদিন সাধারণ মানুষ চাল কিনতে গিয়ে কষ্টেই পড়বে। জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বাজার ব্যবস্থার সংস্কার এবং কৃষি উৎপাদনের প্রতি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগই হতে পারে একমাত্র কার্যকর উপায়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button