সাংবাদিক নির্যাতন: নতুন বাংলাদেশে পুরোনো ছায়া

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিকাশ ও সুশাসনের পথে সাংবাদিকরা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। অথচ দুঃখজনকভাবে, দেশে সাংবাদিক নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বছরের পর বছর সাংবাদিকরা ভয়ভীতি, হুমকি, হামলা, মামলা, গুম ও হত্যার শিকার হচ্ছেন। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর ও মফস্বলÑকোথাও এই চিত্রের ভিন্নতা নেই। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে যে নতুন পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল, তাতে আশা করা হয়েছিল সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়নের সংস্কৃতি বন্ধ হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সরকারি কর্মকর্তাদের অনাকাক্সিক্ষত আচরণের ধারাবাহিকতা এখনো থামেনি। পত্রপত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরার তালায় কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপুর ওপর ঘটে যাওয়া ঘটনাটি এরই একটি দৃষ্টান্ত। দুর্নীতির অনুসন্ধানে গিয়ে তিনি উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীর কাছ থেকে তথ্য জানতে চেয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর ওপর হামলা এবং পরে তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনওর রায়ে তাঁর সাজা দেওয়া দেশের প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত। যদিও ইউএনও বলছেন, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই সাজা দেওয়া হয়েছে, তবু প্রশ্ন থেকে যায়Ñএকজন সাংবাদিককে পেশাগত অনুসন্ধান করতে গিয়ে দ-িত করা ন্যায়বিচারের পরিপন্থি কি না। সাংবাদিকরা তথ্যের অনুসন্ধান করেন জনস্বার্থ রক্ষার জন্য। সরকারি কর্মকর্তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও তাঁদের কাজের অন্যতম অংশ। স্বাভাবিকভাবেই কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি তুলে ধরার প্রচেষ্টায় তাঁদের বাধা দেওয়া গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাম্প্রতিক উদ্বেগও ইঙ্গিত দেয়, গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ দেশে সুশাসনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি দেশের গণমাধ্যম যত স্বাধীন, সে দেশের গণতন্ত্র ততই শক্তিশালী হয়। বাংলাদেশের মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে পিছিয়ে পড়া একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতা, যার পরিবর্তনের প্রত্যাশা এখন আরও বেশি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সাংবাদিকতার স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবতা যেন এখনও পুরোনো ছায়ায় ঢাকা। নতুন বাংলাদেশ গঠনের পথে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করে নয়, বরং তা সহজ করে দিয়েই সত্যিকারের গণতন্ত্র ও সুশাসনের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এজন্য প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা, স্বাধীন তদন্ত এবং সাংবাদিকদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শন জরুরি।