সম্পাদকীয়

সন্ত্রাসের ছায়ায় মোহাম্মদপুর: নাগরিক নিরাপত্তা কোথায়?

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক মাসের ব্যবধানে একই প্রতিষ্ঠানে দুই দফা সশস্ত্র হামলা ও গুলির ঘটনা কেবল স্থানীয় বাসিন্দাদের নয়, বরং পুরো নগরবাসীর মনে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক তৈরি করেছে। একটি জনবহুল আবাসিক এলাকায় দিনের পর দিন সন্ত্রাসীদের এমন দুঃসাহসিক কর্মকা- উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো-প্রথম দফার ঘটনায় একজন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হওয়ার পরও দ্বিতীয়বার একই ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি প্রমাণ করে, অপরাধীরা কেবল সংগঠিতই নয়, তারা আইনের ভয়ও করে না। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, একজন ভুক্তভোগীকে হত্যার হুমকি দিয়ে বিপুল অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়েছে। এমনকি তার পরিবারের সামনেই সন্ত্রাসীরা এসে গুলি চালিয়েছে। এখন পুরো পরিবার আতঙ্কে গৃহবন্দি। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও এখনও দ্বিতীয় দফার ঘটনায় জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তারা একটি পেশাদার সন্ত্রাসী দলের সদস্য। তবে এখানেই প্রশ্ন-তাদের গ্রেপ্তারে এত বিলম্ব কেন? মোহাম্মদপুরের এই সন্ত্রাস-তৎপরতার পেছনে আরও গভীরতর সমস্যা রয়েছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এলাকায় উঠতি সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়েছে, যাদের বড় একটি অংশ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। এদের পেছনে একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীর পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। অভিযোগ আছে, তাঁদের কাছে থানা লুটের সময় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে। এমন চিত্র শুধু আইনশৃঙ্খলা নয়, সামাজিক অবক্ষয়ের দিকটিও স্পষ্ট করে। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেবল অভিযানে নামলেই চলবে না, বরং সরকারকে একটি সমন্বিত, দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ করতে হবে। কিশোর গ্যাংয়ের উৎপত্তি, প্রসার এবং পৃষ্ঠপোষকতার বিরুদ্ধে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা দরকার। এ ছাড়া, সন্ত্রাসীদের যারা রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে-যাতে অপরাধ চক্রগুলোর মেরুদ- ভেঙে পড়ে। সর্বোপরি, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। আজ যদি এক ব্যবসায়ী পরিবার দিনের পর দিন আতঙ্কে জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়, কাল সেই শঙ্কা অন্যদের জন্যও বাস্তব হয়ে উঠতে পারে। এই সন্ত্রাসী কর্মকা-ের লাগাম টেনে ধরা না গেলে, রাজধানীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠবে। তাই দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়-যাতে জনসাধারণ আইন, প্রশাসন এবং রাষ্ট্রের উপর আস্থা ফিরে পেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button