সম্পাদকীয়

জনদুর্ভোগ সৃষ্টি থেকে বিরত থাকুন

আন্দোলন-সড়ক অবরোধ

সরকারি হিসাবে ঢাকা ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের শহর। আর বিশ্বব্যাংকের তথ্যমদে, বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর ঢাকা। এমন একটি নগরে কোনো সড়ক বন্ধ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আন্দোলন চললে কী যে নারকীয় অবস্থায় পড়তে হয়, তা নাগরিকমাত্রই হাড়ে হাড়ে টের পান। সড়ক বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করা কিংবা দাবিদাওয়া জানানোর রেওয়াজ দেশে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোই এ কাজের পথপ্রদর্শক। যে নাগরিকদের অধিকার আদায়ের কথা বলে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়, তাঁদের ভোগান্তি, দুর্ভোগ আর অসুবিধার বিষয়গুলো রাজনৈতিক নেতারা কোনো সময়ই আমলে নেন না। সমাজের অন্য অংশের লোকেরাও তাঁদের দাবি আদায়ে একই পথ অবলম্বন করেন। যেকোনো গণতান্ত্রিক সমাজে নাগরিকের বিভিন্ন অংশের মধ্যে দাবিদাওয়া থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই দাবিদাওয়া জানানোর রীতিসিদ্ধ পথও আছে। সেটা হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক ও আইনসম্মত উপায়ে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমরা এর উল্টো চর্চাটাই দেখছি। যুক্তিবোধের চেয়ে সেখানে আবেগের প্রাধান্যটা বেশি দৃশ্যমান। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব ইশরাক হোসেনকে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা চার দিনের বিক্ষোভ শেষে গত সোমবার নগরভবন ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গুলিস্তানের প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। এর ফলে ব্যস্ত এ এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গুলিস্তান ব্লকেডের ফলে সারি সারি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে যানবাহন। ভোগান্তিতে পড়েন বাস সিএনজিসহ গণপরিবহনের যাত্রীরা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় যে প্রবণতা ক্রমাগত উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, তা হলো দাবি আদায়ের নামে জনজীবনকে অবরুদ্ধ করে ফেলা। প্রতিনিয়ত রাস্তায় আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষের চলাচল ব্যাহত হওয়া, চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষাকর্ম ব্যাঘাত ঘটানো কিংবা নিরাপত্তা বিঘিœত করার ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, গণতান্ত্রিক অধিকারের অপব্যবহার আজ একটি সাংগঠনিক অপসংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টির এ অপসংস্কৃতিতে একদিকে যেমন মানবিকতা, সহমর্মিতা ও দায়িত্বশীলতার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে তেমনি আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং নানা ইস্যুতে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের নীতিনির্ধারকদের ধীর প্রতিক্রিয়া এ সংকটকে দীর্ঘস্থায়ী করছে। এখন সময় এসেছে দাবি আদায়ের জন্য জনগণকে জিম্মি করার এই সমস্যাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে না দেখে একটি সমন্বিত, অন্তর্দৃষ্টিমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করার। আর এ উদ্দেশ্যে একটি ইতিবাচক ও গ্রহণযোগ্য পন্থা নির্ধারণে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। যেখানে জনশিক্ষা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং প্রশাসনিক কাঠামো পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত রেখে দাবির যৌক্তিক ভিত্তি এবং বাস্তবতার আলোকে তার গ্রহণযোগ্য সমাধান বা বিকল্প বের করার মাধ্যমে একটি টেকসই সমাধানের পথ খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। তাই এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য শুধু নৈতিক আহ্বান নয়, বরং আইনের কঠোর প্রয়োগ ও ন্যায়বিচারের সুস্পষ্ট প্রতিফলন প্রয়োজন। জনগণের ন্যায্য দাবিকে সম্মান জানিয়ে, নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা অধিকারকে নিশ্চিত করতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী অপসংস্কৃতিকে নিরুৎসাহিত করে নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button