সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা: টেকসই ভবিষ্যতের পথচিহ্ন

সুন্দরবনকে ঘিরে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা প্রকল্প গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার এক গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের পদক্ষেপ শুধু পরিবেশ রক্ষার নয়, বরং দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ সংরক্ষণের দিকেও এক সুদূরপ্রসারী অঙ্গীকারের প্রতিফলন। ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫’-এর আওতায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো-প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশগত মান উন্নয়ন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবনের ভূ-প্রাকৃতিক গুরুত্ব ও পরিবেশগত অবদান অপরিসীম। এটি শুধু একটি বনাঞ্চল নয়, বরং উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন, জীবিকা ও আবহাওয়া ব্যবস্থার একটি অনিবার্য অংশ। দীর্ঘদিন ধরেই এ অঞ্চল শিল্পায়ন, বনায়ন উচ্ছেদ, বর্জ্য নিষ্কাশন ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এর ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে, সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। একই সঙ্গে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত ‘পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম গ্রহণের’ বিষয়টি ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নকে সামনে রেখেই গ্রহণ করা উচিত। যাতে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা হয়, অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নষ্ট না হয়। তবে এ নিষেধাজ্ঞা শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়নের দিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। অতীতে ইসিএ এলাকায় শিল্প গড়ে তোলার বহু উদাহরণ রয়েছে, যেগুলোর যথাযথ পরিবেশগত মূল্যায়ন হয়নি। এ ধরনের ব্যত্যয় রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছ মনিটরিং ব্যবস্থা এবং নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত সেই ভারসাম্যের দিকে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ। এখন প্রয়োজন তার কার্যকর প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতার প্রসার।